স্তালিনের শাসনে শসটাকোভিচ: বিশ্বাসঘাতকতার যুগে শিল্পের এক মর্মস্পর্শী চিত্র!

শিল্পের আঙিনায় ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি: শস্টাকোভিচের সুর ও কেনট্রিজের চলচ্চিত্রে স্তালিনের শাসনের বিভীষিকা।

বিংশ শতাব্দীর এক ভয়াবহ অধ্যায়কে শিল্পী উইলিয়াম কেনট্রিজের দৃষ্টিতে নতুন করে তুলে ধরা হয়েছে। খ্যাতিমান সুরকার দিমিত্রি শস্টাকোভিচের দশম সিম্ফনির প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই চলচ্চিত্র, ‘ওহ টু বিলিভ ইন অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড’, স্তালিনের শাসনামলের নিষ্ঠুরতা ও বিশ্বাসঘাতকতার এক জীবন্ত দলিল।

লন্ডনের রয়্যাল ফেস্টিভ্যাল হলে পরিবেশিত এই শিল্পকর্ম দর্শকদের মধ্যে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

সোভিয়েত রাশিয়ার ইতিহাসের এক কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে শস্টাকোভিচ তাঁর এই সিম্ফনি রচনা করেন। স্তালিনের শাসনকালে শিল্পকলার ওপর যে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছিল, সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এই সুর যেন এক নীরব প্রতিবাদ।

কেনট্রিজের চলচ্চিত্রে সেই সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা, নিপীড়ন এবং শিল্পীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে চিত্রিত হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, কাগজের তৈরি পুতুলের মাধ্যমে লেনিন ও স্তালিনের মতো শাসকদের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

এছাড়াও, বিপ্লবী কবি ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি এবং আরও অনেক ঐতিহাসিক চরিত্র এই চলচ্চিত্রে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে।

চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে কোলাজ, অ্যানিমেশন এবং পুরনো চলচ্চিত্রের অংশবিশেষ।

এর মাধ্যমে দর্শকদের মধ্যে এক ভিন্ন জগৎ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ইতিহাসের বিভীষিকা ও শিল্পীর যন্ত্রণা একসাথে অনুভব করা যায়। এই কাজের মাধ্যমে কেনট্রিজ শুধু একটি শিল্পকর্ম তৈরি করেননি, বরং তিনি ইতিহাসের এক জটিল অধ্যায়কে নতুন করে ব্যাখ্যা করেছেন।

শস্টাকোভিচের সিম্ফনিটি স্তালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে প্রথম পরিবেশিত হয়।

অনেকের মতে, এই সিম্ফনি স্তালিনের প্রতি এক ধরনের নীরব প্রতিশোধ। কারণ, এর মাধ্যমে স্তালিনের শাসনকালের অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

কেনট্রিজের চলচ্চিত্রে এই সুরের গভীরতা আরও বেড়েছে, যা দর্শকদের স্তালিন যুগের ভয়াবহতা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।

তবে, এই শিল্পকর্ম শুধু স্তালিনের শাসনের কথাই বলে না।

এর মাধ্যমে শিল্পকলার স্বাধীনতা, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং একটি উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্নকেও তুলে ধরা হয়েছে। মায়াকোভস্কির মতো শিল্পীরা তাঁদের বিপ্লবী চেতনা দিয়ে যে নতুন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনাও এই চলচ্চিত্রে সুস্পষ্ট।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেনট্রিজের এই চলচ্চিত্রটি একটি অসাধারণ সৃষ্টি, যা একইসঙ্গে সঙ্গীত এবং চলচ্চিত্রের জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে।

এর মাধ্যমে অতীতের ঘটনাগুলো দর্শকদের সামনে নতুনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের দর্শকদের জন্যও বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।

কারণ, আমাদের দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই ধরনের শিল্পকর্ম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *