ওহাইও অঙ্গরাজ্যের একটি কারাগারে বন্দী অবস্থায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার দুদিন পর, সেখানকার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনেছেন মৃতের পরিবার। পরিবারটির দাবি, কারারক্ষীদের নিষ্ঠুর আচরণের কারণেই ২৫ বছর বয়সী ক্রিশ্চিয়ান ব্ল্যাকের মৃত্যু হয়েছে।
গত ২৪শে মার্চ, ব্ল্যাককে একটি গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগে মন্টোগোমারি কাউন্টি কারাগারে নেওয়া হয়। পরিবারের আইনজীবীর মাধ্যমে পাওয়া কারাগারের ভেতরের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আটকের কয়েক ঘণ্টা পরেই ব্ল্যাক অস্থির হয়ে উঠেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, কমপক্ষে ১০ জন কারারক্ষী ব্ল্যাককে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রস্তুত হচ্ছেন। এরপর তারা তার সেলের ভেতরে প্রবেশ করেন। ব্ল্যাক তখন উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন এবং কর্মকর্তাদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিলেন।
কর্মকর্তাদের প্রতিরোধের এক পর্যায়ে তারা তাকে একটি টেজার (Taser) ব্যবহার করেন। এরপরও ব্ল্যাকের চিৎকার থামেনি। তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন, “আমাকে গুলি কর।”
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ব্ল্যাকের কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল না এবং তিনি কোনো ওষুধও সেবন করতেন না। তাদের আইনজীবী মাইকেল রাইট সিএনএনকে জানান, “আমরা বিশ্বাস করি কর্মকর্তাদের কারণেই ব্ল্যাক এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন।”
ভিডিওতে দেখা যায়, এক পর্যায়ে কারারক্ষীরা ব্ল্যাককে একটি সেফটি রেস্টraint চেয়ারে (safety restraint chair) বসান। মন্টোগোমারি কাউন্টি শেরিফের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এই চেয়ার সাধারণত “আক্রমণাত্মক, আত্মবিধ্বংসী বা সম্ভাব্য হিংস্র কয়েদিদের নিয়ন্ত্রণে” ব্যবহার করা হয়।
এর মাধ্যমে কয়েদি ও কর্মীদের শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকি কমানো যায়। ভিডিওর পাঁচ মিনিটের মাথায় দেখা যায়, চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় ব্ল্যাককে সামনের দিকে ঝুঁকাতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এ সময় একজন কারারক্ষীকে বলতে শোনা যায়, “তাকে শান্ত হতে দাও।” ব্ল্যাক তখন “আমাকে বাঁচাও” বলে চিৎকার করছিলেন। ব্ল্যাকের মা সিএনএনকে বলেন, “ভিডিওতে আমার ছেলের এই অসহায় অবস্থা দেখাটা ছিল খুবই হৃদয়বিদারক।”
ভিডিওর সাত মিনিটের মাথায়, ব্ল্যাককে নিস্তেজ অবস্থায় দেখা যায়। তার মুখ মাস্ক দিয়ে বাঁধা ছিল। এরপর একজন নার্সকে বলতে শোনা যায়, “আমি কোনো হৃদস্পন্দন অনুভব করতে পারছি না।”
কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্ল্যাককে সিপিআর (CPR) দিতে দেখা যায়। পরে ফায়ার ডিপার্টমেন্টের কর্মীরা তাকে মিয়ামি ভ্যালি হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে দুদিন পর তার মৃত্যু হয়।
কোরোনারের প্রাথমিক প্রতিবেদনে ব্ল্যাকের মৃত্যুর কারণ হিসেবে “যান্ত্রিক ও অবস্থানগত শ্বাসরোধ” (mechanical and positional asphyxia) উল্লেখ করা হয়েছে, যা একটি হত্যাকাণ্ড। ব্ল্যাকের মা মিস্তি ব্ল্যাক সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “ওদের (কারারক্ষীদের) কারণেই আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।”
তবে, ওহাইও পেট্রোলম্যান’স বেনেভোলেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (Ohio Patrolmen’s Benevolent Association) এক বিবৃতিতে কারারক্ষীদের পক্ষ সমর্থন করে বলেছে, ব্ল্যাকের “আকার ও শক্তির” কারণে তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকজন কর্মকর্তার প্রয়োজন হয়েছিল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও নিয়ম মেনেই কাজ করতে হয়েছে। ঘটনায় জড়িত ১০ জন কর্মীকে আপাতত বেতনে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
জানা গেছে, ব্ল্যাক ট্রাক চালক হওয়ার জন্য সিডিএল (CDL) পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শেরিফ রবার্ট স্ট্রেক এক বিবৃতিতে ব্ল্যাকের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
ব্ল্যাকের পরিবার শেরিফের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেও, ঘটনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা শেরিফের পদত্যাগও চেয়েছেন এবং ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করার কথা ভাবছেন।
বর্তমানে, ডেটন পুলিশের একটি বিশেষ দল এই ঘটনার তদন্ত করছে এবং শীঘ্রই তারা মন্টোগোমারি কাউন্টি প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তাদের প্রতিবেদন পেশ করবে।
তথ্য সূত্র: CNN