গরম হাওয়া: মায়ের মৃত্যুতে দায়ী তেল কোম্পানিগুলো?

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় সাতটি তেল ও গ্যাস কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি নজিরবিহীন মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটিতে অভিযোগ করা হয়েছে, কোম্পানিগুলোর কার্বন নিঃসরণ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে, যার ফলস্বরূপ চরম আবহাওয়ার সৃষ্টি হয় এবং এর ফলেই এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। খবরটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে।

২০২১ সালের জুন মাসের শেষের দিকে, ওয়াশিংটন রাজ্যে তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা দেয়। তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪২.২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস)-এ, যা ওই অঞ্চলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এই গরমে ৬৫ বছর বয়সী জুলি আনা লিওন নামের এক নারীর মৃত্যু হয়।

জানা যায়, তিনি গাড়িতে করে এক স্থান থেকে ফিরছিলেন, গাড়ির এয়ার কন্ডিশনার কাজ না করায় তিনি গাড়ির জানালা খুলে দেন। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

মামলায় অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো হলো – এক্সন মোবাইল, শেভরন, শেল, বিপি, কনোকোফিলিপস, ফিলিপস ৬৬ এবং বিপি-র অঙ্গসংস্থা অলিম্পিক পাইপলাইন কোম্পানি। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটিয়েছে এবং এর ফলে সৃষ্ট দুর্যোগ সম্পর্কে জন সাধারণকে সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের পণ্য থেকে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানত, কিন্তু সেই তথ্য গোপন রেখেছে।

কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো তারা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। মামলার শুনানিতে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি।

তবে অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। শেভরন কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত শোককে পুঁজি করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই মামলাটি শুধু একটি ঘটনার বিচার নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হতে পারে। বিশ্বে কার্বন নিঃসরণকারী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এমন মামলা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা হয়েছে।

সম্প্রতি, হাওয়াই এবং মিশিগান অঙ্গরাজ্যও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের মামলাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ, এর মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণকারী কোম্পানিগুলোকে তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য করা যাবে। ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে।

এই মামলার রায় কি হয়, সেদিকে এখন সবার নজর। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *