তেলের বাজারে অস্থিরতা, সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কতটা ঝুঁকিতে?
বিশ্বের অর্থনীতিতে তেলের দাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সম্প্রতি বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। কারণ, অনেক দেশের রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস এই তেল।
এর মধ্যে সৌদি আরবের মতো তেলের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর জন্য পরিস্থিতি বেশ কঠিন হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো—তেলের দাম কমার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত শ্রমিকদের রেমিট্যান্সে প্রভাব পড়তে পারে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলো—যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা এবং ওপেক প্লাস (OPEC+) দেশগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারণে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত প্রতি ব্যারেল তেলের গড় দাম থাকতে পারে ৬৩ মার্কিন ডলারের মতো।
এমনকি ২০২৫ ও ২০২৬ সালেও তেলের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ার সম্ভাবনা কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের দাম কমে গেলে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর তেল রপ্তানিকারকদের সমস্যা হবে। এর মধ্যে সৌদি আরব, ওমান ও বাহরাইনের মতো দেশগুলো ক্ষতির শিকার হতে পারে। কারণ, এই দেশগুলোর বাজেট তৈরিতে তেলের দাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরবের কথা ধরলে, তাদের বাজেট ব্যালেন্স করতে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম কমপক্ষে ১০০ ডলার প্রয়োজন।
সৌদি আরব তাদের ভিশন ২০৩০ (Vision 2030) পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যা মূলত তেল থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের ওপর নির্ভরশীল। এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক শহর নিওম (NEOM), লোহিত সাগরের তীরে বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র এবং রিয়াদের কাছে অবস্থিত কুইদিয়া (Qiddiya) বিনোদন পার্কের মতো বৃহৎ পরিকল্পনা।
জানা গেছে, এসব প্রকল্পের প্রথম ধাপের নির্মাণ খরচ কয়েক বিলিয়ন ডলার হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তেলের দাম কমতে থাকলে সৌদি আরবের এই মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বিলম্ব হতে পারে। কারণ, এতে সরকারের মূলধন ব্যয় কমাতে হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে ২০২৯ সালের এশিয়ান শীতকালীন গেমস, ২০৩০ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপো এবং ২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ওপেক প্লাস-এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে উৎপাদন কোটা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কিছু দেশ তাদের উৎপাদন সীমা লঙ্ঘন করছে, যা তেলের দাম কমার অন্যতম কারণ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন-আমেরিকা বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে কিছুটা নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তবুও তেলের দাম স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা এখনো কম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তেলের দাম কমতে থাকলে সৌদি আরবের তেল নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা বিলম্বিত হতে পারে। তবে, তারা আরও বলছেন, সৌদি আরবের আর্থিক অবস্থা এখনো বেশ ভালো।
তারা ব্যয় কমানো এবং ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবে। কারণ, অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশের তুলনায় সৌদি আরবের উৎপাদন খরচ অনেক কম।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো, তেলের দাম কমলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে আসবে, যা আমাদের আমদানি খরচ কমাতে সহায়ক হবে। তবে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত শ্রমিকদের রেমিট্যান্সের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এছাড়া, সৌদি আরবের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি জড়িত থাকলে, তাদের ব্যবসায়ও এর প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন