একটি ব্যতিক্রমী পেশা, যেখানে সমুদ্রই কর্মক্ষেত্র: এক নাবিকের জীবন।
আজকের দিনে, যেখানে আমাদের দেশের বহু মানুষ কাজের খোঁজে বিদেশে পাড়ি জমান, সেখানে সমুদ্রের বুকে একটি বিশেষ ধরনের জীবন কাটানো এক ব্যক্তির গল্প শোনাবো।
কেভিন ও’কনর, ২৬ বছর বয়সী এই যুবক, একজন দ্বিতীয় অফিসার এবং ডাইনামিক পজিশনিং অফিসার (DPO) হিসেবে কাজ করেন, যিনি কিনা একটি সমুদ্রগামী তেল উত্তোলক জাহাজে কর্মরত।
তার কাজের ধরনটা একটু অন্যরকম।
তিনি বছরে অর্ধেক সময়, অর্থাৎ প্রতি চার সপ্তাহ অন্তর জাহাজে কাজ করেন, আর পরের চার সপ্তাহ ছুটি কাটান।
এই কাজের জন্য কেমন জীবন কাটাতে হয়, জানতে চাইলে ও’কনর বলেন, “সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালা খুললেই দেখা মেলে মেক্সিকো উপসাগরের নীল জলরাশির।
এরপর পোশাক পরে কয়েক পা হাঁটলেই শুরু হয় আমার কর্মজীবন।”
ও’কনরের কর্মপরিধি বেশ কঠিন।
জাহাজে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কর্মীদের দল কাজ করে, যাতে জাহাজের কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলতে পারে।
তিনি বলেন, “কাজের দিনগুলো একই রকম হয় না, তবে রাতের শিফটের কর্মীদের কাছ থেকে গত ১২ ঘণ্টার খবর শুনে এবং আগামী ১২ ঘণ্টার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করতে হয়।
এরপর জাহাজের কার্গো পরিচালনা, জাহাজের অবস্থান ঠিক রাখা, মালামাল লোডিং-এর হিসাব রাখা, এই সবকিছুই আমার কাজের অংশ।
কখনো কখনো জাহাজের রক্ষণাবেক্ষণের মতো কাজও করতে হয় তাকে।
একটানা চার সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে কাজ করাটা বেশ কঠিন, কোনো ছুটি নেই।
পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্টটা অনেক বেশি, এমনটাই জানান ও’কনর।
তিনি বলেন, “আমার পরিচিত অনেকেই আছেন, যারা বিবাহিত এবং তাদের সন্তানও রয়েছে।
আমি দেখেছি, এই কাজের কারণে তাদের জীবনে কতটা প্রভাব পড়ে।
তারা যখন বাড়ি ফেরে, তখন দেখে তাদের সন্তান অনেক বড় হয়ে গেছে, যেন তারা তাদের চিনতেই পারে না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “তাদের স্ত্রীদের জন্য খারাপ লাগে, কারণ তারা একদিকে ফুলটাইম চাকরি করে, অন্যদিকে ছোট সন্তানের দেখাশোনা করে।
এই কঠিন জীবনযাত্রায় টিকে থাকতে হলে শক্তিশালী সম্পর্ক এবং সঙ্গীর সমর্থন খুব জরুরি।”
তবে, ও’কনর এটাও মনে করেন যে, এই কাজটা কঠিন হলেও সম্পর্ককে আরও গভীর করতে সাহায্য করে।
কারণ, এতে সঙ্গীর জন্য আলাদা একটা টান অনুভব করা যায়।
কাজের কিছু ভালো দিকও রয়েছে, যেমন মনোরম সমুদ্রের দৃশ্য।
ও’কনর বলেন, “এখানে কাজ করার সবচেয়ে ভালো দিক হলো, চারপাশের অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়।
চারপাশে ডলফিন, টুনা মাছ জলের উপর লাফিয়ে ওঠে, আর সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখা যায়, যা মনকে শান্তি এনে দেয়।
তিনি আরও বলেন, “আমি ভাগ্যবান যে এমন কিছু মানুষের সাথে কাজ করি যাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
তাদের সঙ্গেই আমি বেশি সময় কাটাই, যা পরিবারের থেকে পাওয়া সময়ের চেয়েও বেশি।
যারা এই পেশায় আসতে চান, তাদের জন্য ও’কনরের পরামর্শ হলো—মেরিটাইম একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া অথবা মার্চেন্ট মেরিনার সার্টিফিকেট অর্জন করা।
এই ধরনের কাজ আমাদের দেশের অনেক মানুষের কাছে এখনো অপরিচিত।
তবে যারা বিদেশে কাজ করতে আগ্রহী, তাদের জন্য এই গল্পটি হয়তো নতুন পথের সন্ধান দেবে।
কঠোর পরিশ্রম আর পরিবারের থেকে দূরে থাকার মানসিকতা থাকলে, এই পেশা অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো।
তথ্য সূত্র: পিপল