বয়স বাড়ছে, চিন্তা কিসের? শক্তি আর নমনীয়তার দিকে মনোযোগ দিন!
আজকের দিনে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ধারণাটি আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শুধু দীর্ঘকাল বাঁচার চেয়ে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করাটাই আসল কথা।
আর সুস্থ জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজন শরীরের সঠিক যত্ন নেওয়া। বিশেষ করে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড় ও শরীরের জয়েন্টগুলির স্বাস্থ্য খুবই জরুরি। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বয়সকালে ভালো থাকতে হলে ওজন কমানোর বদলে বরং শরীরের শক্তি ও নমনীয়তার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন পুষ্টিবিদ ও ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক সিডনি নিটজকোরস্কি এবং অর্থোপেডিক সার্জন ও ক্রীড়া মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. জসলিন উইটস্টেইন। তাদের মতে, হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং জয়েন্টগুলিকে সচল রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত শরীরচর্চা অপরিহার্য।
ডাক্তার উইটস্টেইন জানিয়েছেন, “সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। আসলে, হাড়ের ঘনত্ব সাধারণত ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত বাড়ে, এরপর তা বজায় রাখার চেষ্টা করতে হয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের আগে হাড়ের ঘনত্ব বছরে ১% হারে এবং মেনোপজের পরে ২% হারে হ্রাস পায়। পুরুষদের ক্ষেত্রেও প্রতি বছর প্রায় ১% হারে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়।
তাই, অল্প বয়স থেকেই হাড়ের স্বাস্থ্য মজবুত করতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
তাহলে, হাড় ও জয়েন্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কী কী করা যেতে পারে?
- নিয়মিত ব্যায়াম: শুধু কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়ামই যথেষ্ট নয়, বরং শক্তি-প্রশিক্ষণ এবং হালকা ব্যায়াম করা প্রয়োজন। এই ধরনের ব্যায়ামগুলি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ: ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের জন্য অপরিহার্য, সেই সাথে হৃদপিণ্ড, পেশি এবং স্নায়ুগুলির সঠিক কার্যকারিতাতেও সাহায্য করে। খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে।
নিটজকোরস্কির মতে, “অনেকেই ক্যালসিয়াম গ্রহণের বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগ দেন না। প্রতিদিন ১০০০ থেকে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত।” ক্যালসিয়ামের জন্য দুধ, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ, ব্রোকলি, পালং শাক, ছোট মাছ (যেমন, কাঁটাযুক্ত মাছ) ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন।
- ভিটামিন ডি গ্রহণ: ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ২০০০ IU ভিটামিন ডি গ্রহণ করা যেতে পারে।
- প্রদাহরোধী খাবার: প্রদাহ কমাতে এবং জয়েন্টের ব্যথা কমাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার গ্রহণ করা উচিত। এই ধরনের খাবারে শরীরের অন্যান্য উপকারও হয়, যেমন হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, আয়ু বাড়ে এবং হজম ক্ষমতা উন্নত হয়।
অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবারের মধ্যে রয়েছে –
- শাকসবজি: ব্রোকলি, ফুলকপি, পালং শাক, ইত্যাদি।
- ফল: বেরি, আপেল, কমলালেবু ইত্যাদি।
- প্রোটিন: ডিম, মাছ, মুরগি, বিনস, এবং অন্যান্য উদ্ভিজ্জ প্রোটিন।
- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: জলপাই তেল, অ্যাভোকাডো, বাদাম এবং বীজ।
- মশলা: হলুদ, আদা, রসুন, ইত্যাদি।
- হালকা ব্যায়াম: হালকা কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনে সক্রিয় থাকা যায়। যেমন – দাঁত ব্রাশ করার সময় এক পায়ে দাঁড়ানো, টিভি দেখার সময় এক পায়ে ভর দিয়ে বসা, অথবা পায়ের আঙুলে একটি পেন্সিল ধরে বর্ণমালা লেখার চেষ্টা করা।
ডাক্তার উইটস্টেইন আরও যোগ করেন, “হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং জয়েন্টগুলিকে সচল রাখতে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রায় ছোট ছোট পরিবর্তন আনা যেতে পারে। এমনকি অল্প সময়ের জন্য ব্যায়াম করাও উপকারী।”
সুতরাং, সুস্থ জীবন যাপনের জন্য শারীরিক সক্ষমতা ও নমনীয়তার দিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে আপনিও আপনার হাড় ও জয়েন্টগুলিকে সুস্থ রাখতে পারেন, যা আপনাকে আরও সক্রিয় এবং আনন্দময় জীবন দিতে সহায়ক হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন