ওজন কমাতে গিয়ে স্বামী হতবাক! কেন গোপন করছেন অনেকে?

ওজন কমানোর ওষুধ গোপন রাখার কারণ: কেন সমাজে এই নিয়ে দ্বিধা?

বর্তমান বিশ্বে, স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে ওজন কমানোর নানা উপায় নিয়ে মানুষের আগ্রহ। সম্প্রতি, ওজন কমানোর ওষুধ যেমন – ওজেম্পিক, মাউঞ্জারো এবং উইগোভি’র (Ozempic, Mounjaro, Wegovy) ব্যবহার বাড়ছে, তবে এই ওষুধ সেবনের বিষয়টি অনেকেই গোপন রাখতে চান।

এর পেছনে কি কারণ? কেন এই দ্বিধা?

আসলে, সমাজে ওজন কমানোর ওষুধ ব্যবহারের সঙ্গে কিছু সামাজিক ধারণা জড়িয়ে আছে। অনেকে মনে করেন, ওষুধ ব্যবহার করে ওজন কমানোটা যেন ‘সহজ পথ’ বেছে নেওয়া। শরীরচর্চা এবং ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কমানোর পরিবর্তে ঔষধের ব্যবহারকে অনেকে ‘প্রতারণা’ হিসেবেও দেখেন।

সমাজের এই ধারণা এবং ভয়ের কারণে অনেক ব্যবহারকারী তাঁদের ওষুধ সেবনের বিষয়টি গোপন রাখেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের লুকোচুরির কারণ হলো সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির চাপ। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে মানুষকে প্রায়ই কঠোর পরিশ্রম করতে উৎসাহিত করা হয়। নিয়মিত ব্যায়াম এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে তবেই ওজন কমানো সম্ভব – এমন ধারণা অনেকের মধ্যে গেঁথে আছে।

কিন্তু ওজন কমানোর ওষুধ ব্যবহারের ফলে, সেই কাজটি তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে যায়। তাই, অনেকে মনে করেন, ওষুধ ব্যবহার করে ওজন কমানোটা যেন খুব সহজে পাওয়া একটি ফল, যা ‘কৃতিত্বপূর্ণ’ নয়।

এই গোপনীয়তার কারণে অনেক সময় কাছের মানুষের কাছেও বিষয়টি অজানা থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একজন নারী, যিনি ওজন কমানোর জন্য এই ওষুধ ব্যবহার করছেন, তাঁর স্বামী প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারেননি। যখন তিনি কম খেতে শুরু করলেন, তখন স্বামীর মনে হয়েছিল তিনি হয়তো অসুস্থ।

বিষয়টি জানার পর স্বামী কিছুটা অবাক হয়েছিলেন, তবে পরে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছিলেন।

তবে, সবার অভিজ্ঞতা একরকম নয়। কেউ কেউ মনে করেন, তাঁদের পরিবার বা বন্ধুদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা হয়তো এই বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতে পারেন। তাই, তাঁরা আগে থেকেই বিষয়টি গোপন রাখেন।

কারো কারো মধ্যে অতিরিক্ত ওজনের কারণে সমাজে সমালোচিত হওয়ার ভয় কাজ করে। তাঁরা মনে করেন, ওষুধ সেবনের বিষয়টি প্রকাশ করলে, তাঁদের দুর্বল বলে মনে করা হতে পারে।

ওষুধ সেবনের ফলে স্বাস্থ্যগত কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর মতো বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যদিও ওষুধ ব্যবহারের ফলে উপকারিতা পাওয়া যায়, তবুও সমাজের ভীতি এবং সমালোচনার ভয়ে অনেকেই বিষয়টি গোপন রাখতে বাধ্য হন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ওজন কমানোর ওষুধ ব্যবহারের বিষয়টি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। সমাজের উচিত, এই বিষয়ে মানুষকে সমর্থন করা এবং তাঁদের গোপনীয়তা রক্ষা করা।

ওজন কমানোর জন্য মানুষ যে পদ্ধতিই বেছে নিক না কেন, তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *