ওকাভাঙ্গো: ক্যামেরার চোখে বন্যজীবন, বদলে যাচ্ছে স্থানীয়দের জীবন!

ওকাভাঙ্গো ডেল্টা: ক্যামেরার চোখে আফ্রিকার স্বপ্ন

আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানার ওকাভাঙ্গো ডেল্টা, যা জীববৈচিত্র্যের এক অসাধারণ স্থান, প্রতি বছর প্রায় দুই লক্ষ পর্যটকের আনাগোনায় মুখরিত থাকে।

ছবি তোলার নেশা নিয়ে এখানে আসেন বহু মানুষ। কিন্তু এখানকার স্থানীয়দের, বিশেষ করে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর, ক্যামেরার পেছনের গল্প বলার সুযোগ সেভাবে জোটে না।

এই প্রেক্ষাপটে, বতসোয়ানার একজন বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফার, কারাবো লেব্রনপিটার মোইলওয়া-এর উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।

কারাবো, যিনি নিজে একজন মোতসোয়ানা, স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের ফটোগ্রাফি শেখানোর জন্য ‘স্টোরিটেলিং ক্লাব’ তৈরি করেছেন।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এবং ডি বিয়ার্স-এর একটি যৌথ উদ্যোগে ‘ওকাভাঙ্গো ইটারনাল’-এর সহযোগিতায় এই ক্লাবগুলি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

ছবি তোলার প্রাথমিক ধারণা থেকে শুরু করে, কীভাবে একটি গল্পের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে হয়, ক্যামেরার কারিগরি দিকগুলো—সবকিছুই শেখানো হয় এখানে। কারাবো-র ভাষায়, “আমি চাই, আমার এলাকার আরও অনেকে আসুক, তাদের গল্প বলুক।”

কারাবো-র এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো, স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষদের ছবি তোলার মাধ্যমে ক্ষমতায়িত করা।

ছবি তোলার প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি, তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং বন্যজীবন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেও সাহায্য করা হয়।

স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের ক্যামেরার পেছনের গল্প বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য, বীতশা গ্রামের বাইরে ‘নকাশী নলেজ সেন্টার’ তৈরি করা হয়েছে।

এখানে ছবি তোলার সরঞ্জাম ও থাকার ব্যবস্থা ছাড়াও, ছবি প্রদর্শনের জন্য একটি স্থান রয়েছে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে, ইতিমধ্যে ৭০ জনের বেশি তরুণ-তরুণী উপকৃত হয়েছে।

তাদের মধ্যে একজন, বোন্টে মোয়াম্বো, জানান, “ফটোগ্রাফির কারণে আমি এমন সব জায়গায় গিয়েছি, যা আগে কখনো দেখিনি।

বন্যপ্রাণী সম্পর্কে আমার জ্ঞান বেড়েছে, যা আগে আমার ছিল না।” বোন্টের মতো অনেকেই এখন তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গল্প ক্যামেরাবন্দী করতে শিখেছে।

শুধু সাধারণ তরুণ-তরুণী নয়, এই প্রকল্পের আওতায় শ্রবণপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্যও ‘ভিস্যুয়াল ভয়েসেস’ নামে একটি বিশেষ ক্লাব খোলা হয়েছে।

এখানকার সদস্যরাও ছবি তোলার মাধ্যমে নিজেদের ভাবনা প্রকাশ করতে শিখেছে।

নকামোগেলাং মনোনায়াপুলা নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমি চাই, সবাই জানুক একজন শ্রবণপ্রতিবন্ধী ছেলে ছবি তোলে এবং সেটা পেশাদারভাবে।”

এই স্টোরিটেলিং ক্লাবগুলির মাধ্যমে, স্থানীয় তরুণ-তরুণীরা শুধু ছবি তোলাই শেখে না, বরং তারা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের নতুন দিগন্ত খুঁজে পায়।

তাদের কেউ হয়তো ভবিষ্যতে বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফার হবে, কেউ তাদের সংস্কৃতির সংরক্ষণে কাজ করবে, আবার কেউ বিপণন বা চলচ্চিত্র নির্মাণের মতো পেশায় যুক্ত হবে।

কারাবো মনে করেন, “ওকাভাঙ্গো ডেল্টায় আরও অনেক গল্প আছে, যা এখানকার তরুণ-তরুণীদের তুলে ধরা উচিত।

আমরা শুধু তাদের সেই সুযোগটা করে দিচ্ছি।”

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *