কুমির আর রহস্য! আমেরিকার বিশাল জলাভূমি: বিশ্ব ঐতিহ্যের পথে?

ওকেফেনোকে: আমেরিকার বিশাল জলাভূমি, যেখানে কুমির আর বিশ্ব ঐতিহ্যের হাতছানি

আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত ওকেফেনোকে জলাভূমি, যা শুধু একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রই নয়, বরং উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম ব্ল্যাকওয়াটার জলাভূমিও বটে। বিশাল এই জলাভূমিটি প্রায় ৪ লাখ একরের বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।

এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো এর জীববৈচিত্র্য, বিশেষ করে প্রায় ১৫,০০০ কুমিরের বসবাস। এছাড়াও, এখানে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় অনেক প্রজাতির আবাসস্থল, যেমন – ইন্ডিকো সাপ এবং কাঠঠোকরা পাখি।

বর্তমানে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার অন্তর্ভুক্তির জন্য মনোনয়নের অপেক্ষায় রয়েছে জায়গাটি।

‘ওকেফেনোকে’ নামটি এসেছে স্থানীয় আদিবাসী ক্রিক ভাষা থেকে, যার অর্থ ‘ভূমি যা কাঁপছে’। জলাভূমির নিচে থাকা পিটের (peat) কারণে এমনটা অনুভূত হয়।

একসময় এই অঞ্চলে আদিবাসীদের বসবাস ছিল। এরপর আসে বনশিল্প, এবং পরবর্তীতে জলাভূমিটিকে শুকিয়ে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয়। যদিও এর ফলে কিছু অবকাঠামো তৈরি হয়েছিল, যা ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত এখানে আসা অগ্রগামীদের জন্য সহায়ক ছিল।

১৯৩৭ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট ওকেফেনোকে জলাভূমিকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করেন। এই অঞ্চলের অনেক কিছুই বর্তমানে ‘সিভিলিয়ান কনজারভেশন কর্পস’-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে, যার মধ্যে একটি ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ে গঠিত ইউনিট, কোম্পানি ১৪৩৩।

পর্যটকদের জন্য ওকেফেনোকে জলাভূমিতে প্রবেশের একাধিক পথ রয়েছে।

এদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত তিনটি প্রবেশপথ হলো: পশ্চিমাংশে অবস্থিত স্টিফেন সি. ফস্টার স্টেট পার্ক, পূর্বাংশে ফোকস্টন এবং উত্তরাংশে অবস্থিত ওয়্যারক্রস। প্রতিটি প্রবেশ পথে জনপ্রতি ৫ মার্কিন ডলার প্রবেশ ফি দিয়ে ভ্রমণ করা যায়।

এছাড়া, এখানে ন্যাশনাল পার্কের পাসও গ্রহণ করা হয়।

২০২৩ সাল থেকে এই স্থানটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য মনোনয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

যদি এটি এই স্বীকৃতি পায়, তবে এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হওয়া এমন ২৬টি স্থানের একটি, যেখানে এভারগ্লেডস এবং গ্রেট স্মোকি মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্কের মতো স্থানগুলোও রয়েছে।

এর ফলে এই অঞ্চলের পর্যটন বাড়বে এবং একইসঙ্গে জায়গাটির আরও বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে।

বর্তমানে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের প্রচেষ্টা থেকে জলাভূমিটিকে বাঁচাতে এর সীমানা প্রায় ২২,০০০ একর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

ওকেফেনোকে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের জন্য বোট ট্যুর একটি আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে।

এর মাধ্যমে ভ্রমণকারীরা জলের নিচ থেকে উঁকি দেওয়া কুমির এবং আকাশে ওড়া বিভিন্ন পাখির দৃশ্য উপভোগ করতে পারে।

স্টিফেন সি. ফস্টার স্টেট পার্ক, ওকেফেনোকে অ্যাডভেঞ্চারস এবং ওকেফেনোকে সোয়াম্প পার্কে এই ট্যুরের ব্যবস্থা রয়েছে।

গ্রীষ্মকালে এখানকার আবহাওয়া বেশ গরম এবং আর্দ্র থাকে, তাই শরৎ এবং বসন্তকাল ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়।

যারা প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এখানে ক্যাম্পিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে।

স্টিফেন সি. ফস্টার স্টেট পার্ক এবং লরা এস. ওয়াকার স্টেট পার্কে ক্যাম্পিংয়ের সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া, ফোকস্টন এবং ওয়্যারক্রস-এর আশেপাশে কিছু সাধারণ মানের হোটেল ও ভাড়াও পাওয়া যায়।

তবে, এখানকার রেস্টুরেন্টগুলোতে খাবারের খুব বেশি সুযোগ নেই।

তাই, এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিজেদের খাবার সঙ্গে নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ফোকস্টন এবং ওয়্যারক্রস-এর কিছু দোকানে হালকা খাবার পাওয়া যেতে পারে।

ওকেফেনোকে জলাভূমি শুধু একটি প্রাকৃতিক স্থান নয়, বরং এটি একটি ঐতিহাসিক এবং পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেলে, এর গুরুত্ব আরও বাড়বে এবং বিশ্বজুড়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এটি আরও পরিচিতি লাভ করবে।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *