বিজ্ঞানীরা প্রায় ১১৩ মিলিয়ন বছর আগের, ‘নরকের পিঁপড়া’র জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন, যা পিঁপড়ার বিবর্তনের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পাওয়া যাওয়া এই প্রাচীন পিঁপড়ার জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি পিঁপড়ার প্রাচীনতম পরিচিত প্রজাতি।
‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর আবিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে।
আবিষ্কৃত ‘নরকের পিঁপড়া’ (বৈজ্ঞানিক নাম: Haidomyrmecinae) ছিল আকারে প্রায় ১/২ ইঞ্চি লম্বা। ক্রিটেসিয়াস যুগে (প্রায় ১৪৫ থেকে ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে) এদের বিচরণ ছিল।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই পিঁপড়ার চোয়াল ছিল সামনের দিকে বাঁকানো কাঁচির মতো, যা শিকার ধরার কাজে লাগত। তাদের মাথার উপরে একটি শিংও ছিল, যা সম্ভবত শিকারকে গেঁথে রাখতে সাহায্য করত।
সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জুওলজি মিউজিয়ামের কীটতত্ত্ববিদ অ্যান্ডারসন লেপেকো এই আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, “আমি এমন কিছু খুঁজে পাবো, তা কল্পনাও করিনি।”
এই জীবাশ্মটি ব্রাজিলের ক্র্যাটো ফর্মেশন নামক একটি পাথুরে কোয়ারিতে পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা থ্রিডি ইমেজিং ব্যবহার করে ভালোভাবে সংরক্ষিত এই পিঁপড়ার ভেতরের গঠন পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং পিঁপড়ার বিবর্তনের ইতিহাসে এর স্থান নির্ধারণ করেছেন।
এই আবিষ্কার পিঁপড়ার বিবর্তন এবং ক্রিটেসিয়াস যুগের পরিবেশ সম্পর্কে নতুন তথ্য সরবরাহ করে। এর আগে, মিয়ানমারে প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর বয়সী নরকের পিঁপড়ার জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছিল।
এছাড়া কানাডা ও ফ্রান্সেও কিছু জীবাশ্মের সন্ধান মিলেছে। তবে, নতুন এই জীবাশ্মটি আবিষ্কারের ফলে প্রথমবারের মতো গন্ডোয়ানাতে (প্রাগৈতিহাসিক দক্ষিণের মহাদেশ) নরকের পিঁপড়ার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেল।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ক্রিটেসিয়াস যুগে পিঁপড়ার বিবিধ প্রজাতি ছিল এবং তারা বিভিন্ন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছিল।
নরকের পিঁপড়া সম্ভবত তাদের বিশেষ শিকারের পদ্ধতির কারণে টিকে থাকতে পারেনি এবং ক্রিটেসিয়াস-প্যালিওজিন বিলুপ্তি ঘটনার (প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে) পর তারা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
এই সময়ে একটি গ্রহাণুর আঘাতের ফলে পৃথিবীর প্রায় ৭৬ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
এই আবিষ্কার অতীতের কীটপতঙ্গ সম্পর্কে জানতে জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে। গবেষকরা বলছেন, এটি পিঁপড়ার বিবর্তন সম্পর্কে নতুন তথ্য যোগ করবে এবং ক্রিটেসিয়াস যুগের পৃথিবীর চিত্র আরও স্পষ্ট করতে সাহায্য করবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক