ইতালির ‘অপরূপ’ উত্তরে: লম্বার্ডির গোপন সৌন্দর্যে মুগ্ধ ভ্রমণ প্রেমীরা!

ইতালির উত্তরে, অপূর্ব সুন্দর লম্বার্ডির এক লুকানো রত্ন: ওল্ট্রেপো পাভেসে।

ইতালির কথা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সুন্দর ভ্যালি, সবুজ পাহাড় আর আঙ্গুর ক্ষেতের ছবি। অনেকেই হয়তো জানেন, ইতালির সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তোসকানার মনোরম দৃশ্য।

তবে, যারা ইতালি ভ্রমণে নতুনত্ব চান, তাদের জন্য লম্বার্ডির ওল্ট্রেপো পাভেসে হতে পারে এক অসাধারণ গন্তব্য। পো নদীর দক্ষিণে অবস্থিত এই অঞ্চলটি যেন প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি, যেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি আর প্রকৃতির এক দারুণ মেলবন্ধন ঘটেছে।

ওল্ট্রেপো পাভেসে-কে “উত্তর ইতালির তোসকান” হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এর কারণ, এখানকার সবুজ পাহাড়, আঙ্গুর ক্ষেত আর ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলো তোসকান অঞ্চলের মতোই মনোমুগ্ধকর।

তবে, এখানে পর্যটকদের আনাগোনা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায়, প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে। যারা কোলাহলমুক্ত পরিবেশে প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।

ওল্ট্রেপো পাভেসে-র কেন্দ্রবিন্দু হলো ভারজি নামক একটি শহর। ত্রয়োদশ শতকের পুরনো টাওয়ার, চার্চ, প্রাসাদ আর সংকীর্ণ পথ দিয়ে ঘেরা এই শহরটি যেন এক জীবন্ত ইতিহাস।

ভারজির আশেপাশে রয়েছে ১৫টি গ্রাম, যেখানে “সালামে দি ভারজি” নামক বিখ্যাত সালামি তৈরি হয়। যারা ইতালির স্থানীয় খাবার ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই সালামির স্বাদ নেওয়াটা একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।

ভারজির কাছেই রয়েছে বোসমেনসো গ্রাম, যেখানে বুসকোন পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের সদস্যরা তাদের ঐতিহ্যবাহী সালামি তৈরি করেন। তারা নিজেরাই শূকর পালন করেন এবং তাদের তৈরি সালামি কমপক্ষে তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়, যা এর স্বাদ আরও বাড়িয়ে তোলে।

এখানকার রেস্টুরেন্টগুলোতেও স্থানীয় খাবার পাওয়া যায়, যা ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ।

যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন, তাদের জন্য ওল্ট্রেপো পাভেসে-তে রয়েছে অসংখ্য আকর্ষণ। এখানকার সবুজ পাহাড়গুলোতে ট্রেকিং বা হাইকিং-এর সুযোগ রয়েছে।

এছাড়াও, সাইকেল চালিয়ে এখানকার গ্রামগুলো ঘুরে আসা এক দারুণ অভিজ্ঞতা দিতে পারে। মিলান থেকে ভারজি পর্যন্ত গ্রিনওয়ে ধরে সাইকেল চালানো যেতে পারে, যা প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানোর চমৎকার একটি উপায়।

এখানকার মনোরম পরিবেশে নানান ধরনের প্রজাপতি দেখা যায়, যা এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের প্রমাণ দেয়।

ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে, ভারজির কাছে অবস্থিত কাস্তেলো মালাস্পিনা অন্যতম। ত্রয়োদশ শতকে নির্মিত এই দুর্গটি বর্তমানে বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হয়।

এছাড়া, মোগলি গ্রামের কাছে অবস্থিত সান্ট’আলবার্তো দি বুত্রিও হারমিটেজ-এর মতো পুরনো স্থাপনাগুলোও ইতিহাস প্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয়।

যারা ওয়াইন ভালোবাসেন, তাদের জন্য ওল্ট্রেপো পাভেসে-তে রয়েছে অসংখ্য ওয়াইনারি। এখানকার “পিনো নোর” আঙ্গুর থেকে তৈরি হওয়া ওয়াইন বিশ্বজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে।

এখানকার ওয়াইনারিগুলোতে ওয়াইন টেস্টিং-এরও ব্যবস্থা রয়েছে।

এখানে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ চাইলে ঐতিহাসিক প্রাসাদে থাকতে পারেন, আবার কেউ স্থানীয় গেস্ট হাউসেও থাকতে পারেন।

খরচও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। উদাহরণস্বরূপ, একটি আরামদায়ক হোটেলে প্রতি রাতে প্রায় ৯,০০০ টাকার মতো খরচ হতে পারে।

সুতরাং, যারা ইতালি ভ্রমণে নতুনত্ব চান এবং কোলাহলমুক্ত পরিবেশে প্রকৃতির স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্য ওল্ট্রেপো পাভেসে হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, স্থানীয় খাবার এবং ওয়াইনের স্বাদ ভ্রমণকে আরও উপভোগ্য করে তুলবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *