অলিম্পিকের ইতিহাসে কলঙ্কিততম দৌড়: ডোপিংয়ের অন্ধকারে ঢাকা ২০১২ সালের লন্ডন গেমস।
লন্ডন অলিম্পিক গেমসে নারীদের ১৫০০ মিটার ফাইনাল—খেলাধুলার ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত একটি দৌড়। ২০১২ সালের সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী অ্যাথলেটদের মধ্যে অনেকেই ডোপিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন, যা পুরো ইভেন্টটিকে কলঙ্কিত করে তোলে। সম্প্রতি সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে, যেখানে পদকজয়ীদের তালিকাও পরিবর্তিত হয়েছে।
২০১২ সালের সেই বিতর্কিত ১৫০০ মিটার দৌড়ে অংশ নেওয়া ব্রিটিশ অ্যাথলেট লিসা ডব্রিস্কি এবং আমেরিকান দৌড়বিদ শ্যানন রোরবারির ভাষ্য অনুযায়ী, সেই সময়ের পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, মাঠের অন্যান্য প্রতিযোগীরা ছিলেন অনৈতিক উপায়ে সক্ষমতা বাড়ানো খেলোয়াড়। ডব্রিস্কি সেসময় দশম স্থান অর্জন করেছিলেন, কিন্তু পরে ডোপিং কেলেঙ্কারির কারণে তাঁর স্থান পরিবর্তন হয়ে পঞ্চম হয়। অন্যদিকে, রোরবারি ষষ্ঠ স্থান থেকে ব্রোঞ্জ পদক পান।
এই দৌড়ের ফল প্রকাশের পর থেকেই যেন বিতর্কের সূত্রপাত হয়। তুরস্কের আসলি চাকির আল্পটেকিন এবং গামজে বুলুত যথাক্রমে সোনা ও রুপা জিতলেও, পরে তাঁদের ডোপিংয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁদের পদক কেড়ে নেওয়া হয়। বাহরাইনের মারিয়াম ইউসুফ জামাল ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিলেন, কিন্তু পরে তিনি সোনা জেতেন। রাশিয়ার তাতিয়ানা তোমাশোভা চতুর্থ স্থান অর্জন করেছিলেন, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধেও ডোপিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর ফল বাতিল করা হয়।
ডোপিং কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজন অ্যাথলেটের পদক বাতিল করা হয়। এর ফলে পদকের তালিকা নতুন করে সাজানো হয়, যা ক্রীড়া বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এই ঘটনার সূত্রপাত হয়, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মদদে চলা একটি ডোপিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে। এই প্রোগ্রামের মূল হোতা ছিলেন গ্রেগরি রডচেনকভ। তিনি ছিলেন রাশিয়ার অ্যান্টি-ডোপিং ল্যাবরেটরির পরিচালক। তাঁর তত্ত্বাবধানে, অ্যাথলেটদের নমুনা পরিবর্তন করা হতো, যাতে তাঁরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন।
ডোপিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্ব অ্যান্টি-ডোপিং সংস্থা (WADA) এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (IOC) বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। খেলোয়াড়দের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং ডোপিং পরীক্ষার প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হয়েছে। এই ধরনের পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো খেলাধুলায় স্বচ্ছতা এবং ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করা।
লন্ডন অলিম্পিকের এই ঘটনা ক্রীড়া জগতে ডোপিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। এখন খেলোয়াড়দের নিয়মিতভাবে অ্যান্টি-ডোপিং প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। একইসাথে, তাঁদের জীবনযাত্রায়ও এই নিয়মগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়।
এই ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, খেলার মাঠে স্বচ্ছতা বজায় রাখা কতটা জরুরি। ডোপিংয়ের মতো অনৈতিক কার্যকলাপ ক্রীড়ার সম্মানহানি করে এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান