অলিম্পিক গেমস: ক্ষণস্থায়ী আনন্দ নাকি দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা? বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় কি কোনো পরিবর্তন আসে? খেলাধুলার এই বিশাল আসর আয়োজনের ফলে মানুষের মনে কতটা প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে গবেষণা করেছেন লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স (LSE), হার্ভার্ড এবং জার্মানির গবেষকরা।
তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য, যা খেলাধুলা ভালোবাসেন এমন অনেক মানুষের ধারণার সঙ্গে নাও মিলতে পারে।
গবেষকরা ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লন্ডন, প্যারিস ও বার্লিনের প্রায় ২৬,০০০ মানুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। তাদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিক, যেমন – শিক্ষা, বৈবাহিক অবস্থা, আয়, খেলাধুলা করার অভ্যাস এবং তারা কতটা সুখী – এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, অলিম্পিক গেমস চলাকালীন সময়ে লন্ডনের মানুষের মধ্যে খেলাধুলা করার প্রবণতা বাড়ে। বিশেষ করে যারা আগে তেমন একটা শরীরচর্চা করতেন না, তাদের মধ্যে এই আগ্রহ ছিল বেশি। তবে খেলা শেষ হওয়ার একশো দিনের মধ্যেই এর প্রভাব কমে যায়।
গবেষকরা আরও লক্ষ্য করেছেন, অলিম্পিক গেমস চলাকালীন সময়ে সেখানকার মানুষের মধ্যে মদ্যপান ও ধূমপানের পরিমাণও কিছুটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু এই পরিবর্তনও ছিল খুবই ক্ষণস্থায়ী। LSE-র ড. ক্রিশ্চিয়ান ক্রেকেল বলেন, “আমরা প্রায়ই রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে শুনি, অলিম্পিক গেমস সুস্থ জীবনযাত্রার ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। কিন্তু আমাদের গবেষণা বলছে, বাস্তবে তেমনটা হয় না।”
গবেষণায় এটাও দেখা গেছে, অলিম্পিক গেমস মানুষের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে ধারণা বাড়ায়। শুধু হোস্ট সিটি নয়, গেমস চলাকালীন সময়ে লন্ডন, বার্লিন ও প্যারিসের মানুষের মধ্যে জীবন নিয়ে সন্তুষ্টিও বেড়েছিল।
লন্ডনে এই সন্তুষ্টির হার ছিল সবচেয়ে বেশি, যা ওপেনিং সেরেমনি’র পর ৬.৩ থেকে বেড়ে ৭.৩-এ পৌঁছেছিল। তবে, এই ভালো লাগাও বেশি দিন টেকেনি।
তাহলে, সোনা জয়ের আনন্দ কি মানুষকে সুখী করতে পারে? গবেষকরা বলছেন, তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনটি শহরের মানুষের মধ্যে, তাদের দেশের খেলোয়াড়রা ভালো ফল করার পরের দিনগুলোতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি।
তাদের মতে, মানুষের এই ভালো লাগা নির্ভর করে গেমস আয়োজনের ওপর, খেলোয়াড়দের সাফল্যের ওপর নয়।
অবশ্য, অলিম্পিক গেমস আয়োজনের কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন, এর মাধ্যমে শহরের উন্নয়ন হয়, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের সময় পূর্ব লন্ডনে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছিল এবং কয়েক বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার নতুন চাকরি তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু, অলিম্পিক গেমস আয়োজন করা যে খুব সহজ বা লাভজনক, তা নয়। ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকের খরচ ছিল প্রায় ৯ বিলিয়ন পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে ১ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি (পরিবর্তনশীল)। এছাড়া, এর দীর্ঘমেয়াদী সুবিধাগুলোও সবসময় দৃশ্যমান হয় না।
বর্তমানে বিভিন্ন দেশ অলিম্পিক গেমস আয়োজনের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, ২০৩৬ সালের অলিম্পিক গেমস ভারতে অনুষ্ঠিত হতে পারে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন, অলিম্পিক গেমস হলে পর্যটন বাড়বে, দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে এবং খেলাধুলার মাধ্যমে একটি সুস্থ জাতি গঠন করা সম্ভব হবে।
তবে, অতীতে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, অলিম্পিক গেমস আয়োজন সব সময় প্রত্যাশিত ফল নাও দিতে পারে। তাই, এই ধরনের বিশাল আয়োজন করার আগে এর ভালো-মন্দ দুটো দিকই ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিত।
তথ্য সূত্র: The Guardian