ইরানের পরমাণু কর্মসূচি: ওমানের মধ্যস্থতায় তেহরান-ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক।
মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা হলো ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ক আলোচনা। ওমানের রাজধানী মাস্কটে সম্প্রতি এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই অঞ্চলের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, ওমান উভয় দেশের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে।
ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করার জন্য, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরু থেকে এই প্রথম ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হলো। বৈঠকে কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা এখনো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না, তবে দুই দেশের মধ্যে প্রায় অর্ধশতকের শত্রুতার অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে এই আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, যদি কোনো সমাধানে পৌঁছানো না যায়, তাহলে তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর বিমান হামলা চালাতে পারে।
অন্যদিকে, ইরানের কর্মকর্তারাও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তারা তাদের ইউরেনিয়াম মজুদের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।
এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ওমান। আরব উপদ্বীপের পূর্বে অবস্থিত এই সালতানাত, ইরান এবং পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে আলোচনা আয়োজনে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
ওমানের নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ইরানের সঙ্গে দেশটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তাদের এই বিশেষ ভূমিকা পালনে সাহায্য করে।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থার প্রধানের মতে, “ওমান দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের কূটনৈতিক আলোচনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ। বর্তমান পরিস্থিতিতে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে, তখন ওমানের এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
ওমানের এই বিশেষ ভূমিকা, ‘ওমানিব্যালান্সিং’ নামে পরিচিত, যা দেশটির দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্র নীতির একটি অংশ।
ওমানের জনসংখ্যা প্রায় ৫২ লক্ষ, দেশটির অর্থনীতি মূলত তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির জনগণ ইবাদি মুসলিম, যারা সুন্নি ও শিয়াদের বিভাজনের আগে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র, ইরানের সঙ্গে আলোচনার জন্য ওমানের ওপর নির্ভর করে আসছে। এর আগে, বারাক ওবামার শাসনামলে, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছাতেও ওমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
তবে, এবারের আলোচনার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ওমান সাধারণত কূটনৈতিক সম্পর্কগুলো গোপন রাখতে পছন্দ করে, কিন্তু বর্তমানে এই আলোচনাগুলো কিছুটা প্রকাশ্যে হচ্ছে।
যেমন, কাতার আফগানিস্তানের তালেবানদের সঙ্গে আলোচনা করেছে, সৌদি আরব রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকের আয়োজন করেছে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র বন্দী বিনিময়ে মধ্যস্থতা করেছে।
আলোচনার শুরুতে উভয়পক্ষের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে। ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আলোচনাটি পরোক্ষভাবে হবে, যেখানে ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে বার্তা আদান-প্রদান করবেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আলোচনা সরাসরি হবে।
আলোচনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে কিনা।
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরানকে তাদের ইউরেনিয়াম মজুদের পরিমাণ সীমিত রাখতে হতো। কিন্তু বর্তমানে তাদের কাছে এত বেশি ইউরেনিয়াম মজুদ রয়েছে যে তারা চাইলে অনেকগুলো পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে।
এছাড়াও, ইরান অন্তত ২০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে চাইছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রস্তাব করেছেন, “আমেরিকার তত্ত্বাবধানে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হোক”।
তবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বিশ্বাস করা আত্মঘাতী হতে পারে।
ইরানের একজন শীর্ষ উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি তেহরানকে হুমকি দিতে থাকে, তাহলে ইরান আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর পরিদর্শকদের বহিষ্কার করতে পারে এবং জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করে দিতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, উভয় পক্ষকেই আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছাতে হবে, যা এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।