প্রায় পঞ্চাশ মিলিয়ন বছর আগের কথা। যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের জন ডে ফসিল বেডস ন্যাশনাল মনুমেন্টে, তখনকার একটি হ্রদের ধারে হেঁটে বেড়াচ্ছিল একটি ছোট্ট পাখি। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি আবিস্কার করেছেন, সেই সময়ের কিছু জীবাশ্ম যা সেই পাখির জীবনযাত্রার এক দারুণ চিত্র তুলে ধরে।
পাখির পায়ের ছাপের সাথে আরও কিছু চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেছে, যা সেই সময়ের প্রাণীদের আচরণ সম্পর্কে নতুন তথ্য সরবরাহ করে।
এই আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে কনার বেনেট নামের এক তরুণ গবেষকের অক্লান্ত পরিশ্রম। তিনি জন ডে ফসিল বেডস ন্যাশনাল মনুমেন্টের গ্রীষ্মকালীন ইন্টার্ন ছিলেন। বেনেট এবং তার সহকর্মীরা, সেই সময়ের পাখির পায়ের ছাপগুলো খুঁটিয়ে দেখেন এবং থ্রিডি মডেলিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেগুলোর বিস্তারিত চিত্র তৈরি করেন।
এই মডেলিংয়ের ফলে, বিজ্ঞানীরা জীবাশ্মগুলোর আরও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হন।
গবেষণায় দেখা গেছে, পাখির পায়ের ছাপের কাছে ছোট ছোট কিছু গর্তের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, এগুলো বৃষ্টির ফোঁটার কারণে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন আধুনিক পাখির খাবার খাওয়ার পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করেন, তখন তারা বুঝতে পারেন, সম্ভবত পাখিটি খাবার সংগ্রহের জন্য তার ঠোঁট ব্যবহার করেছিল।
পাখির পায়ের ছাপের পাশে থাকা এই চিহ্নগুলো, সেই সময়কার খাদ্য সংগ্রহের একটি চিত্র সরবরাহ করে।
শুধু পাখিই নয়, এই অঞ্চলে বসবাস করা অন্যান্য প্রাণীদের সম্পর্কেও নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা একটি ছোট গিরগিটির পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন।
এছাড়া, বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর পায়ের ছাপও চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রাচীন গণ্ডার বা টেপিরের মত প্রাণী এবং সম্ভবত একটি তলোয়ার দাঁতযুক্ত বাঘের পায়ের ছাপও অন্তর্ভুক্ত।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ধরনের জীবাশ্ম, যা ট্রেস ফসিল নামে পরিচিত, অতীতের পরিবেশ এবং প্রাণীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে।
এই আবিষ্কারগুলো, ইওসিন যুগের (প্রায় ৫৬ থেকে ৩৪ মিলিয়ন বছর আগে) ওরেগনের বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা দিতে সহায়ক।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, তাদের এই গবেষণা অন্যদেরকেও জীবাশ্ম অনুসন্ধানে উৎসাহিত করবে এবং অতীতের অজানা অনেক রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবে।
এই গবেষণার মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা অতীতের পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য এবং প্রাণীজগতের বিবর্তন সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন