যুক্তরাষ্ট্রে বনভূমি পুনরুদ্ধারের নামে গৃহহীনদের উচ্ছেদ অভিযান, বিতর্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের একটি জাতীয় বনভূমিতে বছরের পর বছর ধরে বসবাস করা কয়েক ডজন গৃহহীন মানুষকে উচ্ছেদ করতে শুরু করেছে দেশটির বন বিভাগ। বনভূমি পুনরুদ্ধার এবং দাবানল প্রতিরোধের একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।
কর্মকর্তাদের দাবি, এই এলাকার গাছপালা সরিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হবে, সেই কারণেই এই পদক্ষেপ।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জরুরি অবস্থার কারণে এলাকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখানে বসবাসকারীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্যই এই ব্যবস্থা।
তবে, গৃহহীনদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো এই পদক্ষেপের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের মতে, বনভূমিকে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার ঘোষণার পরেই এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়াটা কাকতালীয় নয়।
তাদের আশঙ্কা, এর পেছনে লগিং বা কাঠ ব্যবসার স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে।
বন বিভাগের মুখপাত্র কেইটলিন ওয়েব এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কারণ, সেখানে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে এবং গাছ কাটার কাজ চলবে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের সেখানে থাকার অনুমতি নেই।
কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের ফলে ওই এলাকার বাসিন্দারা তাদের অস্থায়ী আবাস সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। জানা গেছে, অনেক পরিবার কোভিড-১৯ মহামারীর সময় চাকরি হারানো এবং উচ্চ মূল্যের কারণে ঘরবাড়ি হারালে এই বনভূমিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
আবাসন সংকটের এই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে অনেকেই মনে করছেন, এই পদক্ষেপের ফলে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষগুলো আরও বেশি বিপদের সম্মুখীন হবে।
অন্যদিকে, বন বিভাগ জানিয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকার পরিবেশ পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা করছিল।
বনভূমিতে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও সেই পরিকল্পনারই অংশ। কর্মকর্তারা বলছেন, এখানকার বিনোদন কেন্দ্র এবং হাঁটার পথগুলোও আগামী বছর এপ্রিল মাস পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে।
উচ্ছেদের শিকার হওয়া একজন নারী জানিয়েছেন, তিনি প্রায় তিন বছর ধরে সেখানে বসবাস করছিলেন।
বুধবার রাতে তিনি তার থাকার জায়গা পরিষ্কার করছিলেন এবং তার ট্রেলারটি সরানোর চেষ্টা করছিলেন। ওই নারীর কথায়, “বাতাসে একটা উদ্বেগের চাপ অনুভব করা যাচ্ছিল।
সবাই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।”
আবাসন সংকটের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া একদল মানুষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
তারা উচ্ছেদ বন্ধের জন্য একটি নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেছিলেন, যেখানে দাবি করা হয়েছিল, এই পদক্ষেপের কারণে একশ জনের বেশি মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
কিন্তু আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
বিচারক তার রায়ে বলেছেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার, ভয়াবহ দাবানল প্রতিরোধ এবং ডিশুটস ন্যাশনাল ফরেস্টের সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিছুটা ভিন্ন হলেও, গৃহহীনতা একটি বৈশ্বিক সমস্যা।
আমাদের দেশেও অনেক মানুষ বিভিন্ন কারণে ঘরছাড়া হন।
কাজের অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা দারিদ্র্যের কারণে অনেকেই আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন।
তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও, সমস্যাটি এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন