অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা অঙ্গ প্রতিস্থাপন চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। সাধারণত, মানুষের শরীরে কোনো অঙ্গ বিকল হয়ে গেলে, সেই অঙ্গের কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজন হয় অন্য কোনো সুস্থ মানুষের অঙ্গ।
তবে, সারা বিশ্বে মানুষের অঙ্গের অভাব একটি গুরুতর সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসছে বিজ্ঞান, আর সেই পথে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো ‘জেনোট্রান্সপ্ল্যান্টেশন’ বা প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে অঙ্গ প্রতিস্থাপন। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা এই বিষয়ে নতুন দিগন্ত দেখাচ্ছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বস্তুত, মানুষের শরীরে অন্য কোনো প্রাণীর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ধারণা নতুন নয়। ১৯৫৪ সালে প্রথম সফল মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়, যেখানে যমজ দুই ভাইয়ের মধ্যে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এর অনেক পরে, ১৯৭০-এর দশকে শূকরের ভাল্ব ব্যবহার করে মানুষের হৃদরোগের চিকিৎসাও শুরু হয়। এরপর, চিকিৎসা বিজ্ঞান উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, এই ধারণা আরও প্রসারিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু সেই তুলনায় অঙ্গের সরবরাহ খুবই কম। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে, এক লক্ষেরও বেশি মানুষ এখনো অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষা করছেন। এর মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ১৭ জন মানুষ অঙ্গ না পাওয়ার কারণে মারা যান। এই পরিস্থিতিতে শূকরের অঙ্গ ব্যবহার করে প্রতিস্থাপনের ধারণা নতুন আশা জাগাচ্ছে।
শূকরের অঙ্গ ব্যবহারের কারণও রয়েছে। মানুষের আকারের সঙ্গে শূকরের অঙ্গের মিল রয়েছে এবং এদের প্রজনন ক্ষমতাও বেশি। বিজ্ঞানীরা জেনেটিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শূকরের ডিএনএ পরিবর্তন করতে পারেন, যাতে মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সময় জটিলতা কমানো যায়। এই পদ্ধতিতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
ইতিমধ্যে, বেশ কয়েকজন রোগীর শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন টিম অ্যান্ড্রুজ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর জন্য অন্য কোনো মানুষের কিডনি পাওয়া কঠিন ছিল। অবশেষে, তিনি পরীক্ষামূলকভাবে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের সুযোগ পান। যদিও এই চিকিৎসা এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, তবে রোগীদের জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই গবেষণায় সাফল্যের পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন, প্রতিস্থাপিত অঙ্গ কত দিন শরীরে কার্যকর থাকবে, অথবা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কীভাবে কাজ করবে—এগুলো এখনো গবেষণার বিষয়। তবে, বিজ্ঞানীদের আশা, এই ধরনের গবেষণা ভবিষ্যতে আরও অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবে।
এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জেনোট্রান্সপ্ল্যান্টেশন শুধু একটি চিকিৎসা পদ্ধতি নয়, বরং এটি মানবতার জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এই পদ্ধতির সাফল্যের জন্য প্রয়োজন রোগীদের সাহস এবং বিজ্ঞানীদের নিরলস চেষ্টা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন