নারী ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘অর্গাসমিক মেডিটেশন’-এর নামে একটি বিতর্কিত যৌন স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। সেই প্রতিষ্ঠানের দুই প্রধান ব্যক্তির বিচার চলছে বর্তমানে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, নারীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁদেরকে কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য করা হতো এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে প্ররোচিত করা হতো।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে বিচারাধীন এই মামলার প্রধান অভিযুক্তরা হলেন ওয়ানটেস্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান নির্বাহী নিকোল ডেডোন এবং প্রাক্তন সেলস প্রধান র্যাচেল শেরউইজ। ২০২৩ সালের জুন মাসে তাঁদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক শ্রমের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়।
কর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এই দুই নারী তাঁদের কর্মীদের জীবনকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিতে চেয়েছিলেন। তাঁদের ঋণে জর্জরিত করা হতো এবং বেতন বন্ধ করে দেওয়া হতো।
এমনকি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেও বাধ্য করা হতো।
তৎকালীন মার্কিন অ্যাটর্নি ব্রিয়ন পিস এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “ক্ষমতায়ন এবং সুস্থ জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে অভিযুক্তরা কর্মীদের জীবনে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।” অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, নারীদের অর্থনৈতিক, যৌন, মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতন করা হয়েছে।
তাঁদের ওপর নজরদারি চালানো হতো এবং ভীতি প্রদর্শন করা হতো। তবে, অভিযুক্তরা তাঁদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তাঁরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।
গত ৬ই মে, ব্রুকলিন ফেডারেল আদালতে শুনানির শুরুতে সহকারী মার্কিন অ্যাটর্নি শন ফার্ন বলেন, “ভুক্তভোগীরা ব্যক্তিগত উন্নতির আশায় ওয়ানটেস্টে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা তাঁদের আগের সত্তা হারিয়ে ফেলেছেন।” তিনি আরও বলেন, “আর এই সবের বিনিময়ে অভিযুক্তরা ক্ষমতা, খ্যাতি এবং অর্থ লাভ করেছেন।”
২০০৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে নিকোল ডেডোন এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন।
ওয়ানটেস্ট-এর মূল লক্ষ্য ছিল নারীদের নিজস্ব যৌন আনন্দ উপভোগের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করা। ডেডোন দীর্ঘদিন ধরে বৌদ্ধধর্মের অনুসারী ছিলেন।
তিনি এমন একটি ‘বৈজ্ঞানিক-ভিত্তিক অনুশীলন’ তৈরি করেন, যেখানে ১৫ মিনিটের জন্য একজন নারীকে যৌনভাবে উদ্দীপ্ত করা হতো।
ডেডোনের আইনজীবী জেনিফার বনজঁ বলেন, “এটা অনেকটা যোগাভ্যাসের মতো, তবে একটু ভিন্ন।”
অভিযোগ অনুসারে, ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওয়ানটেস্ট কোর্স, কোচিং এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেছে।
নিউইয়র্ক সিটি, সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস, অস্টিন এবং লন্ডনেও তাদের কার্যক্রম ছিল।
গিনেথ প্যালট্রো এবং ক্লো কার্দাশিয়ানের মতো সেলিব্রিটিরাও এই পদ্ধতির অনুসারী ছিলেন।
২০১৭ সালে ডেডোন ১ কোটি ২০ লক্ষ ডলারে ওয়ানটেস্ট বিক্রি করেন।
আদালতে সরকারি আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, এই প্রতিষ্ঠানের নেতারা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের এবং দুর্বল নারীদের তাঁদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে আকৃষ্ট করতেন।
এরপর তাঁদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হতো অথবা সামান্য কিছু টাকা দিয়ে তাঁদের রান্নাবান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মতো কাজ করতে বাধ্য করা হতো।
এর ফলে তাঁরা ঋণে জর্জরিত হতেন এবং বিনিয়োগকারী ও ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য হতেন।
তবে, অভিযুক্ত নারীদের আইনজীবীরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তাঁদের দাবি, কেউ এই ধরনের কাজে অংশ নিতে বাধ্য হননি।
বনজঁ-এর মতে, ভুক্তভোগীরা তাঁদের সম্মতিসূচক যৌন কার্যকলাপের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন এবং পরে তাঁরাই অভিযোগ করেছেন যে তাঁদের এই কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “এটা কোনো জোর-জবরদস্তি ছিল না।
এমনকি এটা হয়তো এক প্রকারের মানসিক উন্নতি।”
নিকোল ডেডোন এক সাক্ষাৎকারে এই অভিযোগগুলোকে ‘মিডিয়ার তৈরি করা একটি গল্প, যা সরকার গ্রহণ করেছে’ বলে অভিহিত করেছেন।
অভিযুক্তদের এক মুখপাত্র জানান, “এই মামলাটি শুরু করা উচিত হয়নি।
ওয়ানটেস্ট সবসময় ক্ষমতায়ন, সম্মতি এবং আরোগ্য-এর কথা বলেছে।
আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, আদালতে ঘটনার সত্যতা প্রকাশ পাবে।”
যদি এই মামলায় ডেডোন এবং শেরউইজ দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তাঁদের ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
তথ্য সূত্র: পিপল