পৃথিবীর বুকে এক বিশাল প্রাণী, কুমির প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ওরিনোকো কুমির। এদের অস্তিত্ব আজ চরম হুমকির মুখে, যেন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। ভেনেজুয়েলার গভীর অরণ্যে এদের আবাসস্থল, কিন্তু শিকার আর খাদ্য সংকটের কারণে এরা আজ বিলুপ্তির পথে।
সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই কুমিরদের বাঁচানোর জন্য বিজ্ঞানীদের নিরন্তর চেষ্টা এবং টিকে থাকার লড়াইয়ের চিত্র ফুটে উঠেছে।
এই বিরল প্রজাতির কুমির একসময় চামড়ার জন্য শিকার হত, কিন্তু এখন তাদের প্রধান শত্রু হলো সেখানকার দরিদ্র মানুষ। খাবারের অভাবে তারা কুমির শিকার করতে বাধ্য হচ্ছে, এমনকি তাদের ডিমও সংগ্রহ করছে।
ভেনেজুয়েলার বিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতিতে অসহায়, কারণ তাদের বাঁচানোর চেষ্টা যেন এক অসম যুদ্ধ। এক হিসেবে জানা যায়, বন্য পরিবেশে এখন ১০০টিরও কম ওরিনোকো কুমির টিকে আছে।
কুমিরদের বাঁচাতে ভেনেজুয়েলার বিজ্ঞানীরা এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা ডিম এবং বাচ্চা কুমির সংগ্রহ করে খাঁচায় লালন-পালন করেন, তাদের খাবার দেন এবং প্রয়োজনীয় যত্ন নেন।
যখন কুমিরগুলো এক বছর বয়সে পৌঁছায়, তখন তাদের আবার প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই সময়টা তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বন্য পরিবেশে তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা তখনই বেশি থাকে।
প্রতি বছর, প্রায় ২০০টি কুমিরকে তারা মুক্তি দেন।
তবে, বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নন যে তাদের এই প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে। তাদের আশঙ্কা, স্থানীয় মানুষের সচেতনতার অভাব এবং খাদ্য সংকটের কারণে এই কুমিরগুলো হয়তো বেশি দিন বাঁচবে না।
তবুও, তারা হাল ছাড়তে রাজি নন। তাদের মতে, বিলুপ্তি ঠেকানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াটাই আসল। যদি তারা ভালো সময়ের অপেক্ষায় থাকেন, তাহলে হয়তো কোনোদিনই সেই সুযোগ আসবে না।
এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় সুন্দরবনের বাঘ কিংবা বাংলাদেশের অন্যান্য বিপন্ন প্রাণীগুলোর কথা। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।
আমাদের দেশেও, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদকে রক্ষা করতে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা