বদলে ফেলুন জীবন! অর্থহীন চাকরি ছেড়ে বিশ্ব পরিবর্তনে ঝাঁপিয়ে পড়ুন!

নৈতিক আকাঙ্ক্ষা: নিজের জীবনকে সমাজের কল্যাণে উৎসর্গ করার এখনই সময়

আজকের বিশ্বে, যেখানে চারদিকে এত সমস্যা, সেখানে অনেকেই হয়তো নিজেদের কর্মজীবন নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। ভালো একটা চাকরি করছেন, হয়তো ভালো বেতনও পাচ্ছেন, কিন্তু মনের গভীরে একটা অতৃপ্তি কাজ করে।

মনে হয়, জীবনটা যেন আরও কিছু পাওয়ার জন্য, আরও বড় কিছু করার জন্য। এই ভাবনা থেকেই আসে নৈতিক আকাঙ্ক্ষার ধারণা। নৈতিক আকাঙ্ক্ষা হলো নিজের কাজ দিয়ে সমাজের ভালো কিছু করার তীব্র বাসনা।

জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, বৈষম্য—এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেকে উৎসর্গ করার মানসিকতাই হলো নৈতিক আকাঙ্ক্ষা।

আমরা চারপাশে তাকিয়ে দেখি, চারপাশে কত প্রতিভা, কত সম্ভাবনা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেই প্রতিভারা এমন সব কাজে ব্যস্ত, যা হয়তো সমাজের তেমন কোনো উপকারে আসে না।

কেউ হয়তো এমন অফিসে কাজ করছেন যেখানে তার কাজটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অথবা এমন কোনো পদে আছেন যেখানে তিনি সমাজের কোনো পরিবর্তন আনতে পারছেন না।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৮ শতাংশ কর্মী মনে করেন তাদের চাকরিটা খুব একটা কাজের নয়। আরও ১৭ শতাংশের মনে হয়, তাদের কাজ সমাজের জন্য খুব বেশি কিছু করে না।

তাহলে উপায়? কিভাবে এমন একটা জীবন গড়া যায়, যা একইসঙ্গে অর্থপূর্ণ এবং সমাজের জন্য উপকারী?

এখানে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে।

প্রথমত, আমাদের বুঝতে হবে, জীবন একটাই। এই সীমিত সময়ে আমরা কি করতে চাই, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

একটা ভালো ক্যারিয়ার মানেই কি শুধু ভালো একটা পদ, বেশি বেতন, কিংবা অফিসের বড় একটা কামরা? নাকি এর বাইরেও কিছু আছে? নৈতিক আকাঙ্ক্ষা সম্পন্ন মানুষেরা সমাজের প্রচলিত সাফল্যের সংজ্ঞা থেকে বেরিয়ে আসেন।

তারা নিজের পথ তৈরি করেন, সমাজের ভালো কিছু করার জন্য চেষ্টা করেন।

দ্বিতীয়ত, আমাদের চারপাশে ভালো কাজের সুযোগের অভাব নেই। বিশ্বজুড়ে এখনো ক্ষুধা বাড়ছে, স্বৈরাচার বাড়ছে, এবং মানুষের মধ্যে উদ্বাস্তু হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

একদিকে যখন তাপমাত্রা বাড়ছে, বিজ্ঞানীরা বলছেন সমাজের মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন, ঠিক তখনই আমাদের নৈতিক আকাঙ্ক্ষার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

কিন্তু অনেকের মনে হতে পারে, আমার তো একটা চাকরি আছে, দুটো বাচ্চা আছে, সংসার আছে, এত পরিবর্তনের কথা ভাবার সময় কোথায়? আমি তো এমনিতেই মাঝে মাঝে পুনর্ব্যবহার করি, অল্প-স্বল্প নিরামিষও খাই।

তাদের জন্য হয়তো নৈতিক আকাঙ্ক্ষা বিষয়টা কঠিন। তবে, যারা পরিবর্তন আনতে চান, তাদের জন্য কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

আসুন, কয়েকটি সম্ভাব্য পথের কথা ভাবা যাক।

প্রথম প্রকার: এমন কিছু কাজ, যেখানে তেমন কোনো নৈতিক আকাঙ্ক্ষা বা আদর্শের ছোঁয়া নেই। অফিসের হিসাব মেলানো, এমন সব কাজ যেখানে সমাজের কোনো উপকার হয় না।

দ্বিতীয় প্রকার: এখানে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা উচ্চাকাঙ্ক্ষী, কিন্তু তাদের মধ্যে আদর্শের অভাব রয়েছে। তারা হয়তো ভালো একটা পদ চান, বেশি বেতন চান।

সমাজের ভালো করার চেয়ে তাদের কাছে ব্যক্তিগত সাফল্যটাই বড়।

তৃতীয় প্রকার: এই দলে আছেন এমন কিছু মানুষ, যারা আদর্শবাদী, কিন্তু তাদের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষার অভাব রয়েছে। তারা হয়তো ছোটখাটো কিছু কাজ করেন, কিন্তু বড় পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চান না।

চতুর্থ প্রকার: এই ধরনের মানুষরাই পারেন সমাজের জন্য সবচেয়ে বেশি কিছু করতে। তাদের মধ্যে থাকে নৈতিক আকাঙ্ক্ষা, এবং সেই অনুযায়ী কাজ করার মানসিকতা।

তারা শুধু ভাবেন না, ‘এইটা করা উচিত’, বরং সেই কাজটা করেন।

উদাহরণস্বরূপ, টমাস ক্লার্কসনের কথা ভাবুন। তিনি ছিলেন একজন ব্রিটিশ লেখক ও সমাজকর্মী।

ক্রীতদাস প্রথা বিলোপের জন্য তিনি সারা জীবন কাজ করে গেছেন। এমনকি যখন তিনি তরুণ ছিলেন, তখনও তিনি এই বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন।

তিনি সমাজের জন্য বড় কিছু করতে চেয়েছিলেন, এবং শেষ পর্যন্ত তা করে দেখিয়েছেন।

নৈতিক আকাঙ্ক্ষা সম্পন্ন মানুষেরা সমাজের জন্য অনেক কিছু করতে পারেন। তাদের মধ্যে কেউ ডাক্তার, কেউ প্রকৌশলী, কেউ বা উদ্যোক্তা।

তাদের একটাই লক্ষ্য— সমাজের ভালো করা, এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তারা ঝুঁকি নিতেও প্রস্তুত।

সুতরাং, আপনি যদি আপনার জীবনকে অর্থবহ করতে চান, সমাজের জন্য কিছু করতে চান, তবে এখনই সময়। পরিবর্তনের ভয়কে জয় করে এগিয়ে আসুন।

হয়তো আপনার ভেতরের নৈতিক আকাঙ্ক্ষা আপনাকে আরও অনেক দূর নিয়ে যাবে, যা আপনি আগে কল্পনাও করেননি।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *