বিখ্যাত হতে বুদ্ধ ও বিজোর পরামর্শ! অকপট ওশেন ভ্যুং

নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত হতে চলেছে ভিয়েতনাম থেকে আসা মার্কিন লেখক ও কবি ওশেন ভুংয়ের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য এম্পেরর অফ গ্লাডনেস’। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের নতুন বই, খ্যাতি, পরিবার এবং আমেরিকার সমাজের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

ওশেন ভুংয়ের লেখায় প্রায়ই উঠে আসে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও অভিজ্ঞতার কথা। তাঁর মতে, পরিবার তিন ধরনের—নিউক্লিয়ার পরিবার, যা আমরা আমেরিকান জীবনের কেন্দ্র হিসেবে দেখি; পছন্দের পরিবার, যেখানে যৌনতা বা লিঙ্গপরিচয়ের কারণে বিতাড়িত হওয়া মানুষজন বন্ধুত্বের মাধ্যমে একটি কমিউনিটি তৈরি করে; এবং কর্মপরিবেশের পরিবার, যেখানে আমরা আমাদের কর্মজীবনের সূত্রে পরিচিত হই। ‘দ্য এম্পেরর অফ গ্লাডনেস’ উপন্যাসে এই তিনটি ধরনের পরিবারের কথাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র হাই, যিনি ১৯ বছর বয়সী একজন তরুণ। তাঁর মা দরিদ্র একজন ভিয়েতনামি অভিবাসী, যিনি ছেলের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন। বাস্তবে হাই মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পেতে পুনর্বাসন কেন্দ্রে যান। লেখক নিজেও মাদকাসক্তির সঙ্গে লড়াই করেছেন। নিজের মায়ের কাছে তিনি বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। বইটির মূল বিষয় হলো হাইয়ের সঙ্গে লিথুয়ানিয়া থেকে আসা বৃদ্ধা গ্রাজিনার সম্পর্ক। ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতায় আক্রান্ত গ্রাজিনা হাইকে আশ্রয় দেন, যখন তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এছাড়া, হাইয়ের কর্মস্থল ‘হোমমার্কেট’ নামক একটি ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টের কর্মীদের চরিত্রও এই উপন্যাসে বিশেষভাবে চিত্রিত হয়েছে।

লেখকের মতে, কর্মক্ষেত্রের বিশেষ পরিবেশের কারণেই বইটিতে মানুষের গভীর সম্পর্কগুলো তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে। তিনি নিজেও এক সময় দুটি ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। সেই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, সেখানকার কর্মীদের ব্যক্তিগত কথাবার্তা তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করত।

২০১৯ সালে প্রকাশিত ওশেন ভুংয়ের প্রথম উপন্যাস ‘অন আর্থ উই আর ব্রিফলি গর্জিয়াস’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বইটি যুক্তরাজ্যে ৫ লক্ষ এবং বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে। বইটি ৪০টির বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ‘দ্য এম্পেরর অফ গ্লাডনেস’-এর মতোই এটিও লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের মতো, ভুংও একসময় তামাকের খামারে অবৈধভাবে কাজ করতেন। তাঁর মা, লে কিম হং, একটি নেইল স্যালুনে কাজ করতেন। মায়ের কর্মক্ষেত্রের রাসায়নিকের প্রভাবে তাঁর স্তন ক্যান্সার হয়েছিল এবং এর ফলেই তিনি মারা যান।

দারিদ্র্যের মধ্যে টিকে থাকার সংগ্রাম তাঁর লেখায় বিশেষভাবে ফুটে ওঠে। ওশেন ভুং মনে করেন, দরিদ্র মানুষরা প্রায়ই অসহায় শিকার হিসেবে বিবেচিত হয়, কিন্তু আমেরিকায় টিকে থাকার জন্য অসাধারণ সৃষ্টিশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রয়োজন হয়।

খ্যাতি প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, খ্যাতি তাঁর জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। খ্যাতিকে সামলানোর জন্য তিনি বৌদ্ধধর্ম এবং গায়িকা বিয়র্কের পরামর্শ অনুসরণ করেন। তাঁর মতে, খ্যাতি জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে, বিশেষ করে পুরস্কার—যেমন, ম্যাকআর্থার ফেলোশিপ (৬ লক্ষ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার)। তবে খ্যাতি সবসময়ই অতীতের সঙ্গে জড়িত থাকে।

লেখক হিসেবে পরিচিত হওয়ার আগে, ১১ বছর বয়স পর্যন্ত ওশেন ভুং লিখতে বা পড়তে পারতেন না। তিনি মনে করেন, তাঁর পরিবারে সম্ভবত ডিসলেক্সিয়া ছিল। তাঁর নতুন উপন্যাসটি ডি. এইচ. লরেন্সের ‘সন্স অ্যান্ড লাভার্স’-এর মতোই, যেখানে শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং দারিদ্র্যের সংকট তুলে ধরা হয়েছে।

ওশেন ভুং বর্তমানে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে আধুনিক কবিতা ও কাব্যতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তিনি তাঁর ছোট ভাই এবং দীর্ঘদিনের সঙ্গী, আইনজীবী পিটার বিয়েনকোভস্কির সঙ্গে ম্যাসাচুসেটসের একটি পুরনো ফার্ম হাউজে বসবাস করেন।

রাজনৈতিক প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকার অনেক মানুষ তাদের দেশের অতীত, বিশেষ করে দাসত্ব ও গণহত্যার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে চায় না। তিনি মনে করেন, বামপন্থীদের ভুল হলো, তাঁরা ট্রাম্পের ওপর বেশি মনোযোগ দেন। তিনি বারাক ওবামার সময়কে হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেন।

ওশেন ভুং তাঁর বন্ধু এবং সমকামীদের জন্য লেখার স্থান তৈরি করেছেন। তিনি তাঁর বন্ধুদের জন্য একটি উন্মুক্ত আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যেখানে তাঁরা তাঁদের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *