মৃত্যুর মুখে শকুন! মাছ শিকারের ফলে কি কমছে ঈগল?

মাছ শিকারী ঈগল: এক সময়ের সংকট, এখন আবার?

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ এলাকার চিত্র, যেখানে মাছ শিকারী ঈগল পাখির ছানারা খাদ্য সংকটে ভুগছে, যা পরিবেশবিদদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় কীটনাশকের কারণে এই পাখি প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল, তবে ডিডিটি নিষিদ্ধ হওয়ার পর এদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে।

কিন্তু এখন, বিজ্ঞানীরা বলছেন, খাদ্য সংকট আবার তাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভার্জিনিয়ার একটি গবেষণা দলের প্রধান ব্রায়ান ওয়াটস-এর মতে, সমস্যাটি হলো মেনহেডেন নামক ছোট একটি মাছ, যা ঈগলদের প্রধান খাদ্য। অতিরিক্ত মাছ শিকারের কারণে এই মেনহেডেন মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঈগল ছানারা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না এবং অনেক ছানা মারা যাচ্ছে।

ওয়াটস এই বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন এবং তার গবেষণাপত্রগুলি বিভিন্ন বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তার মতে, একটি ঈগল পরিবার তাদের বংশবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখতে বছরে গড়ে ১.১৫টি ছানা জন্ম দিতে হয়। কিন্তু বর্তমানে কিছু অঞ্চলে এই সংখ্যা অর্ধেকেরও কম।

তবে, এই সমস্যার জন্য সবাই মাছ শিকারকে দায়ী করতে রাজি নয়। মৎস্য শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ এবং নগরায়নের মতো আরও অনেক কারণ থাকতে পারে।

তাদের মতে, ঈগল পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে মাছ শিকারই একমাত্র কারণ নয়। তারা মেনহেডেন মাছের টেকসই উৎপাদনের ওপর জোর দেন এবং জানান যে, এই মাছ থেকে তৈরি তেল ও খাদ্য বিভিন্ন কৃষি খাতে ব্যবহার করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক উপকূলের রাজ্যগুলোর মৎস্য কমিশন মেনহেডেন মাছের ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন নিয়ম তৈরির কথা ভাবছে। এর মধ্যে মাছ ধরার সময়সীমা নির্ধারণ, কোটা সীমাবদ্ধতা এবং বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরার সরঞ্জামের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করা হচ্ছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, ঈগল পাখির সংখ্যা কমে যাওয়া উদ্বেগের বিষয়। তারা মনে করেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে এই পাখিগুলো আবার বিপদের সম্মুখীন হবে।

অন্যদিকে, মৎস্য শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, মাছ শিকারের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হলে তাদের রুটিরুজি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এই ঘটনার মাধ্যমে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মধ্যেকার সম্পর্ক নতুন করে আলোচনায় এসেছে। যেমন, আমাদের দেশের সুন্দরবনেও বিভিন্ন পাখির খাদ্য সংকট দেখা যায়, যার কারণ হতে পারে নদীর গতিপথ পরিবর্তন বা অতিরিক্ত লোনা জল।

তাই, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য মাছ শিকার ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *