হাড় মজবুত রাখার রহস্য! অস্টিওপোরোসিস থেকে বাঁচা কি সম্ভব?

অস্টিওপোরোসিস: দুর্বল হাড়ের নীরব ঘাতক, প্রতিরোধের উপায় কী?

অস্টিওপোরোসিস, হাড়ক্ষয় রোগ হিসেবে পরিচিত, যা হাড়কে দুর্বল করে তোলে এবং সামান্য আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এটি বয়স্ক মানুষের, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বজুড়ে অস্টিওপোরোসিসের প্রকোপ বাড়ছে, এবং এর কারণ হলো জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও খাদ্যাভ্যাসের অভাব।

যুক্তরাজ্যের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী প্রতি দুইজন নারীর মধ্যে একজনের এবং পাঁচজন পুরুষের মধ্যে একজনের হাড় ভাঙার সম্ভবনা থাকে। আমাদের দেশেও এই রোগের বিস্তার বাড়ছে, তবে সঠিক পরিসংখ্যানের অভাব রয়েছে।

অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঝুঁকি বাড়ে। মহিলাদের মেনোপজের পর হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়াও, কম ওজনের (BMI), পারিবারিক ইতিহাস, ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, কিছু রোগ (যেমন, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস) এবং স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবনের কারণেও এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, সবুজ শাকসবজি, এবং মাছ ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। ভিটামিন ডি এর জন্য সূর্যের আলোতে যাওয়া প্রয়োজন, তবে বাংলাদেশে শীতকালে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া কঠিন হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।

নিয়মিত ব্যায়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। ওজন বহনকারী ব্যায়াম (weight-bearing exercise), যেমন – হাঁটা, দৌড়ানো, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা, ইত্যাদি হাড়ের জন্য উপকারী। এছাড়াও, ব্যালেন্স বা ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম, যেমন – যোগা, তাই চি, এবং পিলাটেস, পড়ে যাওয়া এবং হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

অস্টিওপোরোসিস নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা রয়েছে। সাধারণত, প্রাথমিক পর্যায়ে একটি ফ্র্যাকচার রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট টুল (Frax questionnaire) ব্যবহার করা হয়। এই প্রশ্নোত্তর আপনার ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। প্রয়োজন অনুযায়ী, ডাক্তার হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপ করার জন্য ডেক্সা স্ক্যান (Dexa scan) করার পরামর্শ দিতে পারেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব মাপা হয় এবং রোগের তীব্রতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে অস্টিওপোরোসিসের চিকিৎসায় কিছু ঔষধ রয়েছে। এই ঔষধগুলো হাড়ের ক্ষয় কমানো বা নতুন হাড় তৈরিতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত।

অস্টিওপোরোসিস একটি গুরুতর রোগ, তবে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এর ঝুঁকি কমানো সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সময় মতো রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা গ্রহণ করে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়। আপনার হাড়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোনো সন্দেহ থাকলে, দ্রুত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *