ইউরোপে পর্যটকদের ‘অত্যাচার’, ভ্রমণের আগে দুঃসংবাদ!

ইউরোপে পর্যটনের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে বর্তমানে বিতর্ক তুঙ্গে। অনেক শহরেই অতিরিক্ত পর্যটকদের আনাগোনা সেখানকার স্থানীয় জীবনযাত্রায় ফেলেছে গভীর প্রভাব।

প্যারিসের ল্যুভর জাদুঘরের কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল, বার্সেলোনায় “পর্যটন নিপাত যাক” স্লোগান তুলে বিক্ষোভ হয়েছে, লিসবনে পর্যটকদের জন্য ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দাদের “উচ্ছেদ” অভিযান—এসবই অতিরিক্ত পর্যটনের কুফল।

আসলে, পর্যটকদের ভিড় যে কোনও জায়গার স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে। অত্যাধিক পর্যটকের আনাগোনা একদিকে যেমন শহরের বাসিন্দাদের জন্য বাসস্থান ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেয়, তেমনই শহরের পরিবেশের উপরও খারাপ প্রভাব ফেলে।

রাস্তাঘাটে যানজট বাড়ে, স্থানীয় সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং অনেক সময় স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যায়।

পর্যটনের ভালো দিকও আছে। পর্যটন একটি এলাকার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে, কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে।

কিন্তু সমস্যা হল, অনেক সময় পর্যটনের সুফলগুলি স্থানীয় মানুষের কাছে পৌঁছায় না। মুনাফার সিংহভাগ চলে যায় বহুজাতিক সংস্থাগুলোর হাতে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও অনেক সময় পর্যটকদের জন্য ব্যবসা করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তাহলে উপায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যটনকে একটি টেকসই পথে নিয়ে যেতে হবে।

এর মানে হল, পর্যটকদের এমনভাবে আকর্ষণ করতে হবে, যাতে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার উপর খারাপ প্রভাব না পড়ে। এর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

প্রথমত, পর্যটকদের সচেতন করতে হবে। তাঁদের বোঝাতে হবে, কীভাবে তাঁরা পরিবেশ ও স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারেন।

স্থানীয় সংস্কৃতিকে সম্মান জানানো এবং স্থানীয় জিনিসপত্র কেনা পর্যটকদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

দ্বিতীয়ত, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

পর্যটন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পর্যটকদের জন্য উপযুক্ত নীতিমালা তৈরি করতে হবে, যা পরিবেশ ও স্থানীয় সংস্কৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

তৃতীয়ত, পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

তাঁদের এমনভাবে ব্যবসা করতে হবে, যাতে স্থানীয় অর্থনীতি উপকৃত হয় এবং স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ে।

ইউরোপের অনেক শহরেই এখন পর্যটনের এই সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বার্সেলোনার মতো শহরগুলোতে সরকার পর্যটকদের জন্য ভাড়ার উপর নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করছে।

পর্যটন কর বাড়ানোর কথাও ভাবা হচ্ছে, যাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখা যায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা পর্যটনের কথা বলি, তাহলে কক্সবাজারের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

এখানেও পর্যটকদের অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে পরিবেশের উপর খারাপ প্রভাব পড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে।

সুন্দরবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে পর্যটকদের আনাগোনা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করতে পারলে পর্যটকদের আনাগোনা যেমন বাড়ানো যাবে, তেমনই স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত করা সম্ভব হবে।

পর্যটনকে একটি ইতিবাচক শক্তিতে পরিণত করতে হলে, পর্যটকদের সচেতনতা, সরকারের সঠিক নীতি গ্রহণ এবং পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *