আতঙ্ক! জেল ভেঙে পালালো ‘ওজার্কসের শয়তান’, কী হবে এবার?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরকানস রাজ্যের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে এক কুখ্যাত প্রাক্তন পুলিশ প্রধানের পলাতক হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ‘ডেভিল ইন দ্য ওজার্কস’ নামে পরিচিত, এই ব্যক্তি খুনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন এবং কারাগার থেকে পালানোর সময় এক কারারক্ষীর ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন।

খবরটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ভুক্তভোগীদের পরিবারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, গ্রান্ট হার্ডিন নামের এই প্রাক্তন পুলিশ প্রধান আরকানস-মিসৌরি সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত গেটওয়ে শহরের বাসিন্দা ছিলেন।

২০১৭ সালে জেমস অ্যাপলটন নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে এবং ১৯৯৭ সালে একজন শিক্ষিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।

তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। রোববার (৯ জুন, ২০২৪) তিনি উত্তর-সেন্ট্রাল ইউনিট নামক একটি মাঝারি-নিরাপত্তা কারাগার থেকে পালান।

আদালত সূত্রে জানা যায়, হার্ডিন একজন কারারক্ষীর পোশাক পরে এবং তার মতো আচরণ করে কারাগারের গেট দিয়ে বেরিয়ে যান।

আরকানস কারেকশনস বিভাগের মুখপাত্র র‍্যান্ড চ্যাম্পিয়ন জানান, হার্ডিন যে পোশাক পরেছিলেন, তা কারারক্ষী বা বন্দীদের স্ট্যান্ডার্ড পোশাকের থেকে ভিন্ন ছিল।

তিনি আরও বলেন, “আমরা জানার চেষ্টা করছি, তিনি কীভাবে এই পোশাক সংগ্রহ করতে পারলেন অথবা তৈরি করলেন।” চ্যাম্পিয়ন আরও উল্লেখ করেন যে, হার্ডিনকে মাঝারি নিরাপত্তা কারাগারে রাখার সিদ্ধান্ত তার অপরাধের গুরুত্ব এবং বিভিন্ন কারাগারের প্রয়োজন অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, হার্ডিনের পালানোর ঘটনায় ভুক্তভোগী জেমস অ্যাপলটনের বোন চেরিল টিলম্যান জানিয়েছেন, তারা সবাই আতঙ্কিত।

কারণ, তারা হার্ডিনের বিচারকার্যে সাক্ষী ছিলেন। টিলম্যান বলেন, “আমরা তার বিচার দেখেছি এবং তিনি আমাদের সেখানে দেখেছিলেন। তিনি আমাদের চেনেন।”

হার্ডিনকে ধরার জন্য কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছে।

ক্যানাইন, ড্রোন এবং হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আরকানস-এর দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হচ্ছে। চ্যাম্পিয়ন জানান, এই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি অভিযানের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, তবে হার্ডিনের পালিয়ে যাওয়ার পথও সীমিত।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হার্ডিন ২০১৬ সালে গেটওয়ে শহরের পুলিশ প্রধান ছিলেন।

ওই শহরে প্রায় ৪৫০ জন মানুষের বসবাস। ঘটনার পর স্থানীয় শেরিফ চার্লি মেলটন এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা বাসিন্দাদের বাড়ি ও গাড়ি লক করার এবং কোনো সন্দেহজনক কিছু দেখলে দ্রুত ৯১১ নম্বরে ফোন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

হার্ডিনের বিরুদ্ধে খুন ও ধর্ষণের মামলা পরিচালনা করা আইনজীবী ব্রায়ান সেক্সটন জানিয়েছেন, তিনি হার্ডিনের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

হার্ডিনকে নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র ‘ডেভিল ইন দ্য ওজার্কস’-এর কথা উল্লেখ করে সেক্সটন বলেন, “যারা ইতিমধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়েছেন, তাদের কাছে আবার এই ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেওয়াটা আমার জন্য খুবই কষ্টের।”

স্থানীয় ক্যাফে মালিক ডারলা নিক্স জানান, হার্ডিনকে তিনি শান্ত ও মিশুক হিসেবে জানতেন।

নিক্স বলেন, “তিনি সবসময় সমাজের একজন সদস্য ছিলেন।” হার্ডিনকে একজন “খুবই বুদ্ধিমান ব্যক্তি” হিসেবে বর্ণনা করে নিক্স আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, তাকে ধরা কঠিন হবে।

এদিকে, চেরিল টিলম্যান হার্ডিনের পালানোতে বিস্মিত হননি।

তিনি বলেন, “সে একজন খারাপ মানুষ। সমাজের জন্য সে ভালো নয়।”

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *