কাশ্মীরে সম্প্রতি সংঘটিত একটি সন্ত্রাসী হামলার পর সেখানকার রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে। গত মাসে পাহালগামে হওয়া ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়।
এর জেরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে এবং এই পরিস্থিতিতে বন্দী কাশ্মীরিদের পরিবারের উদ্বেগ বেড়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকে হাজার হাজার কাশ্মীরিকে আটক করা হয়েছে। ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদির সরকার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।
আটককৃতদের অনেকেই রাজনৈতিক বন্দী, যাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা বা ভারত বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত বছর অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক নির্বাচনে অনেক পরিবার আশা করেছিল যে, নতুন সরকার তাদের স্বজনদের মুক্তি দেবে। কিন্তু পাহালগামের ঘটনার পর সেই আশায় জল ঢেলেছে।
এরই মধ্যে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করছে এবং এর ফলে কাশ্মীর উপত্যকায় উত্তেজনা বেড়েছে। নয়াদিল্লি এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে।
কাশ্মীরের অনেক পরিবার এখন তাদের স্বজনদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। তাদের আশঙ্কা, এই ধরপাকড়ের ফলে মুক্তি পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যাবে।
শ্রীনগরের বাসিন্দা শাকিলা জানান, তাঁর ছেলে ফায়জাবকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে আটক করা হয়েছে। নির্বাচনের পর ছেলের মুক্তির সামান্য যে আশা জেগেছিল, পাহালগামের ঘটনার পর তা প্রায় নিভে গেছে।
শাকিলা বলেন, “নির্বাচনের পর ছেলেকে ফিরে পাওয়ার যে সামান্য আশা ছিল, পাহালগাম ঘটনার পর তা দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে। আমি ভয় পাচ্ছি, পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে এবং আমার ছেলের মুক্তি সহজে হবে না।”
কাশ্মীর, যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি বিতর্কিত অঞ্চল, ১৯৪৭ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে বিবাদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই দেশ এই অঞ্চল নিয়ে একাধিকবার যুদ্ধ করেছে।
১৯৮৯ সালে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে সংঘাত আরও তীব্র হয়।
গত বছর অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচন ছিল গত এক দশকের মধ্যে প্রথম। নির্বাচনে জয়ী হওয়া দলগুলো রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি অথবা তাদের কাশ্মীরের অভ্যন্তরে অন্য কারাগারে স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
কিন্তু নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরও বন্দী মুক্তির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
আরেকজন নারী, ইশরাত, তাঁর ভাইয়ের মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছেন। তাঁর ভাইকেও একটি বিতর্কিত আইনে আটক করা হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি কাশ্মীর থেকে অনেক দূরে একটি কারাগারে বন্দী।
ইশরাত জানান, কারাগারে তাঁর ভাইয়ের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে এবং সেখানকার পরিস্থিতি খুবই কষ্টের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কাশ্মীরে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া এবং তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। তাঁদের মতে, বাইরের কারাগারে বন্দী করে রাখলে কাশ্মীরিদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবোধ আরও বাড়ে, যা সেখানকার পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তোলে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বর্তমানে সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ জটিল। অনেক পরিবার তাঁদের স্বজনদের মুক্তির জন্য সরকারের পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম