ভোরবেলার পাখির ডাকে মুগ্ধ: এক নতুন অভিজ্ঞতার গল্প!

প্রকৃতির সুরের মূর্ছনা: এক নতুন অভিজ্ঞতার সন্ধান।

ভোরবেলা পাখির কলকাকলিতে মন ভরে ওঠে, প্রকৃতির এই সুর যেন এক অন্য জগৎ।

ইংল্যান্ডের গ্লুচেস্টারশায়ারের একটি জলাভূমিতে (wetland) এমনই এক মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা হলো, যেখানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী একজন নারী পাখির গান শুনে প্রকৃতির সঙ্গে এক গভীর সংযোগ স্থাপন করেছেন।

ওয়াইল্ডফাউল অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড ট্রাস্ট (WWT)-এর স্লিমব্রিজ কেন্দ্রে (Slimbridge Centre) একটি কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

সেখানে ভোরে পাখির গান শোনার অভিজ্ঞতা হয় তাঁর।

চারপাশে তাকালে দেখা যায় নানা ধরনের পাখি—পাখিদের ওড়াউড়ি, তাদের নিজস্ব জগৎ।

প্রশিক্ষক মার্টিন তাঁকে পাখি চিনতে সাহায্য করেন, তাদের স্বতন্ত্র সুরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

তিনি শোনান ফিঞ্চ পাখির মিষ্টি গান, যা যেন এক টুকরো রুপোলি ঝর্ণা।

আরও শোনান রিড ওয়ার্বলার পাখির একটানা গান, যা প্রায় যন্ত্রের মতো শোনাচ্ছিল।

কাঠবিড়ালি পাখির মৃদু ডাক যেন গ্রীষ্মের উষ্ণ রাতের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।

দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, হাঁসের দল তাদের ছানাদের নিয়ে পথ ধরে হেঁটে যায়।

এই দৃশ্যগুলো যেন প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কর্মশালার পরে, সেখানকার স্বেচ্ছাসেবক ডট তাঁকে রিজার্ভে (reserve) নিয়ে যান।

সেখানে সেভার্ন নদীর মোহনার দিকে তাকালে মন ভরে যায়।

ডট জানান, পাখির গান শোনার দক্ষতা বাড়াতে সময় লাগে, নিয়মিত চর্চা করতে হয়।

স্লিমব্রিজ-এর কাছেই রয়েছে কোটসও‌র্ল্ডস (Cotswolds) এবং তার আশেপাশে ঘোরার অনেক জায়গা।

একদিন তাঁরা ডার্সলে (Dursley) শহরে যান এবং এভারেস্ট নেপালিজ অ্যান্ড ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে (Everest Nepalese and Indian Restaurant) মুখরোচক খাবার উপভোগ করেন।

পরের দিন, তাঁরা ইউলি (Uley)-তে যান, যেখানে সপ্তদশ শতাব্দীর ওল্ড ক্রাউন ইন-এ (Old Crown Inn) মাশরুম ওয়েলিংটন-এর (mushroom wellington) স্বাদ নেন।

এরপর তাঁরা ইউলি বারি (Uley Bury)-র দিকে যান, যা একটি প্রাচীন পাহাড়ের দুর্গ।

সেখানকার সরু পথ ধরে হেঁটে, সবুজ বনভূমির মধ্যে দিয়ে তাঁরা পাহাড়ের উপরে ওঠেন।

সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে, তাঁরা চারপাশের প্রকৃতির নীরবতা অনুভব করেন।

পাহাড়ের উপরে বসে স্বামী বলেন, “ওগুলো ব্ল্যাকবার্ড পাখি।”

স্ত্রী হেসে উত্তর দেন, “আর আমি তো একটা কাঠবিড়ালি পাখির ডাক শুনলাম।”

এই ভ্রমণ তাঁদের প্রকৃতির সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়—বুনো ফুলের মিষ্টি গন্ধ, ত্বকে সূর্যের আলো, আর পাখির গান শুনে তাদের চিনতে পারা।

এই অভিজ্ঞতা তাঁদের বিশেষভাবে আনন্দ দেয়, যা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী একজন মানুষের জন্য এক অসাধারণ অনুভূতি।

স্লিমব্রিজ-এ থাকার জন্য ওয়ার্বলার্স মেডো-তে (Warblers’ Meadow) রয়েছে সুন্দর কয়েকটি ঘর, যা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার সুযোগ করে দেয়।

সেখানে আরামদায়ক বিছানা, শাওয়ার রুম, রান্নাঘর এবং বসার জায়গা রয়েছে।

রাতে বারান্দায় বসে পাখির গান শোনা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

ক্যানো সাফারিও (canoe safari) এখানকার একটি আকর্ষণ।

গাছের ছায়ায় ঘেরা জলপথে ক্যানো করে ঘোরার অনুভূতি যেন এক গোপন জগৎ-এ প্রবেশের মতো।

শান্ত পরিবেশে জলের শব্দ, ভেজা মাটির গন্ধ—সবকিছু মিলে এক মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়।

এই ভ্রমণ প্রকৃতির সঙ্গে গভীর সংযোগ স্থাপনের এক দারুণ সুযোগ ছিল।

পাখির গান শোনা, তাদের চিনতে পারা—দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ওই নারীর জীবনে এনেছিল এক নতুন আনন্দ।

প্রকৃতির এই সুরের মূর্ছনা, যাঁর কানে পৌঁছেছিল, তিনি যেন নতুন করে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *