ভোরের আলোয় পাখির এই কলরব কেন? শুনলে অবাক হবেন!

ভোরের আলো ফুটতেই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। বসন্তের সকালে এই দৃশ্য যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব সুরের মূর্ছনা।

বিশেষ করে ভোরবেলায় পাখিদের এই সম্মিলিত গান ‘ডন কোরাস’ নামেই পরিচিত। এটি শুধু একটি শব্দগুচ্ছ নয়, বরং প্রকৃতির এক অসাধারণ রহস্য।

পাখিদের এই কলকাকলি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? মূলত, প্রজনন ঋতুতে সঙ্গীর অনুসন্ধানে, নিজেদের এলাকা চিহ্নিত করতে এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য তারা এই সময়ে গান গায়।

শীতের শেষে যখন বসন্ত আসে, তখন অনেক পাখি তাদের বাসা বাঁধার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। পুরুষ পাখিরা তাদের গান দিয়ে সঙ্গীকে আকৃষ্ট করে এবং নিজেদের এলাকা ঘোষণা করে।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো দেশগুলোতে মার্চ মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে ডন কোরাস শোনা যায়, যখন অনেক পাখি শীতের আবাসস্থল থেকে এখানে এসে প্রজনন করে। তবে স্থানভেদে এর সময়ে ভিন্নতা দেখা যায়।

উদাহরণস্বরূপ, এপ্রিল মাসটি দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্রে এই দৃশ্যের জন্য সেরা সময়, আবার ওয়াশিংটন ডিসিতে মে মাসের শুরুতে এই কোরাস ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।

গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে, সারা বছরই এই দৃশ্য দেখা যেতে পারে, কারণ সেখানকার পাখিদের প্রজনন প্রক্রিয়া দীর্ঘকাল ধরে চলে।

কিন্তু ভোরবেলাতেই কেন পাখিরা গান গায়? বিজ্ঞানীরা এর কারণ অনুসন্ধানে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

একটি ধারণা হলো, ভোরের আবহাওয়া পাখির গান ছড়িয়ে দিতে সহায়ক হয়। ভোরবেলার শীতল ও আর্দ্র বাতাস শব্দের বিস্তারকে আরও ভালোভাবে সাহায্য করে।

রাতের বেলা পুরুষ পাখিরা তাদের এলাকা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে এবং প্রতিপক্ষের কাছে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়।

পাখিদের এই গান শুধু শ্রবণযোগ্য আনন্দই দেয় না, বরং পরিবেশ বিজ্ঞানীদের জন্য এটি মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে।

ডন কোরাস পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা পাখির প্রজাতি এবং তাদের সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা পান। এর মাধ্যমে একটি এলাকার বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য কেমন, সে সম্পর্কেও ধারণা করা যায়।

বাংলাদেশেও কি এমন দৃশ্য দেখা যায়? হ্যাঁ, আমাদের দেশেও অনেক পাখি ভোরবেলা গান গায়।

বিশেষ করে, বসন্তকালে যখন প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে ওঠে, তখন বিভিন্ন প্রজাতির পাখির গান শোনা যায়, যা আমাদের প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বেনে বৌ, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, টুনটুনি, ফিঙে সহ আরও অনেক পাখি ভোরবেলা তাদের সুরেলা কণ্ঠে গান গেয়ে ওঠে।

সুতরাং, আপনিও এই বসন্তে সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রকৃতির এই সুর উপভোগ করতে পারেন। আপনার বাড়ির পাশে, গ্রামের সবুজ-শ্যামল পরিবেশে অথবা কোনো পার্কে গিয়ে চুপ করে শুনুন পাখির গান।

প্রকৃতির এই সুরেলা সঙ্গীতে নিজেকে হারাতে পারাটাও এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *