পাখির জগৎ: বাইনোকুলার ও স্পটিং স্কোপ দিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা!

পাখির ছবি তোলার শখ? সেরা বাইনোকুলার ও স্পটিং স্কোপ-এর সন্ধান

প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে পাখি দেখা (birdwatching) একটি দারুণ উপভোগ্য বিষয়। আজকাল অনেকেই এই শখের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন, যা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার এক চমৎকার উপায়।

পাখির ছবি তোলার জন্য ভালো মানের সরঞ্জাম ব্যবহার করাটা জরুরি। এক্ষেত্রে বাইনোকুলার (binoculars) এবং স্পটিং স্কোপ (spotting scopes) হতে পারে আপনার সেরা বন্ধু।

বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণে আগ্রহী হলে অথবা পাখির শরীরের সূক্ষ্ম বিবরণ যেমন তাদের পালকের রঙ, ঠোঁটের গড়ন ইত্যাদি ভালোভাবে দেখতে চাইলে, একটি ভালো মানের বাইনোকুলার এবং স্পটিং স্কোপ-এ বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ।

হালকা ও বহনযোগ্য বাইনোকুলার একজন পাখিপ্রেমীর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়, অনেকটা ব্যাকপ্যাকারের কাছে একটি ব্যাকপ্যাকের মত। অন্যদিকে, স্পটিং স্কোপ সাধারণত বেশি শক্তিশালী হয় এবং পাখির আরও বিস্তারিত ছবি দেখাতে পারে।

তাহলে, সেরা বাইনোকুলার ও স্পটিং স্কোপ বাছাই করার সময় কী কী বিষয় মনে রাখতে হবে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক:

  • ম্যাগনিফিকেশন (Magnification): ম্যাগনিফিকেশন হলো একটি বস্তুকে কতগুণ বড় করে দেখা যাবে, তার পরিমাপ। উদাহরণস্বরূপ, ১০x ম্যাগনিফিকেশন-এর বাইনোকুলার ব্যবহার করলে একটি পাখি স্বাভাবিক আকারের চেয়ে ১০ গুণ বড় দেখাবে।
  • অবজেক্টিভ লেন্সের ব্যাস (Objective lens diameter): এটি লেন্সের আকার নির্দেশ করে এবং এটি আলোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। বড় ব্যাসের লেন্স কম আলোতেও ভালো দৃশ্যমানতা নিশ্চিত করে।
  • ভিউয়ের ক্ষেত্র (Field of view): এটি হলো একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে আপনি কতটুকু এলাকা দেখতে পাচ্ছেন, তার পরিমাপ।
  • আই রিলিফ (Eye relief): যারা চশমা ব্যবহার করেন, তাদের জন্য চোখের আরামের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আই রিলিফ হলো লেন্স থেকে চোখের দূরত্ব, যা ভালো দেখার জন্য প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজেট অনুযায়ী বাইনোকুলার কেনার ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ গুণ ম্যাগনিফিকেশন উপযুক্ত। স্পটিং স্কোপ-এর ক্ষেত্রে, দূরের পাখি দেখার জন্য উচ্চতর ম্যাগনিফিকেশন (২০x থেকে ৬০x) প্রয়োজন হতে পারে।

এবার কিছু নির্বাচিত বাইনোকুলার এবং স্পটিং স্কোপ নিয়ে আলোচনা করা যাক:

সেরা বাইনোকুলার (Binoculars):

সেরা (Best overall): Swarovski Optik NL Pure 10×42: এই বাইনোকুলারটিতে ১০x ম্যাগনিফিকেশন রয়েছে, যা দূর থেকে পাখির পালক এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করে। এর ৪২-মিলিমিটার লেন্স মেঘলা বা কম আলোতেও ভালো কাজ করে।

হালকা ও সহজে ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় ভ্রমণ এবং সাধারণ ব্যবহারের জন্য এটি খুবই উপযোগী।

  • ওজন: ৮৫০ গ্রাম
  • ভিউয়ের ক্ষেত্র: ৩৯৯ ফুট/ ১০০০ গজ
  • ক্লোজ ফোকাস: ৬.৬ ফুট
  • আই রিলিফ: ১৮ মিমি
  • লেন্সের ব্যাস: ৪২ মিমি
  • ম্যাগনিফিকেশন: ১০x

ভ্রমণের জন্য সেরা (Best travel): Swarovski Optik NL Pure 8×32: যারা ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই বাইনোকুলারটি আদর্শ। এটি হালকা ও ছোট হওয়ায় সহজে বহন করা যায়।

  • ওজন: ৬৪০ গ্রাম
  • ভিউয়ের ক্ষেত্র: ৪৫0 ফুট/ ১০০০ গজ
  • ক্লোজ ফোকাস: ৬.৬ ফুট
  • আই রিলিফ: ১৮ মিমি
  • লেন্সের ব্যাস: ৩২ মিমি
  • ম্যাগনিফিকেশন: ৮x

মাঝারি দামের সেরা (Best mid-priced): Nikon Monarch M7 10×42: এই বাইনোকুলার-এ রয়েছে উন্নত মানের ED গ্লাস, যা পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল ছবি সরবরাহ করে।

  • ওজন: ৬৮০ গ্রাম
  • ভিউয়ের ক্ষেত্র: ৩৬২ ফুট/ ১০০০ গজ
  • ক্লোজ ফোকাস: ৮.২ ফুট
  • আই রিলিফ: ১৬.৫ মিমি
  • লেন্সের ব্যাস: ৪২ মিমি
  • ম্যাগনিফিকেশন: ১০x

সেরা স্পটিং স্কোপ (Spotting Scopes):

সেরা (Best overall): Swarovski Optik BTX Spotting Scope System: এটিতে রয়েছে ডাবল আইপিস মডিউল, যা বাইনোকুলারের মতোই আরামদায়ক ভিউ নিশ্চিত করে।

  • ওজন: ২১৯০ থেকে ৩৫৩০ গ্রাম (কনফিগারেশনের উপর নির্ভর করে)
  • ভিউয়ের ক্ষেত্র: ১১২ ফুট/৯৬ ফুট @ ১০০০ গজ (কনফিগারেশনের উপর নির্ভর করে)
  • ক্লোজ ফোকাস: ৭.২-১৬.৪ ফুট (কনফিগারেশনের উপর নির্ভর করে)
  • আই রিলিফ: ২১ মিমি
  • লেন্সের ব্যাস: ৬৫, ৮৫, ৯৫ এবং ১১০ মিমি (কনফিগারেশনের উপর নির্ভর করে)
  • ম্যাগনিফিকেশন: ৩০x এবং ৩৫x (কনফিগারেশনের উপর নির্ভর করে)

বাজেট স্পটিং স্কোপ (Best budget): Nikon Prostaff 5 20-60×82 mm Angled Body: অপেক্ষাকৃত কম দামে ভালো মানের ছবি পাওয়ার জন্য এটি একটি চমৎকার বিকল্প।

  • ওজন: ৯৬০ গ্রাম (বডি)
  • ভিউয়ের ক্ষেত্র: ১০৯ ফুট/ ১০০০ গজ (সবচেয়ে কম ম্যাগনিফিকেশন)
  • ক্লোজ ফোকাস: ২০ ফুট
  • আই রিলিফ: ১৬.৯ মিমি (সবচেয়ে কম ম্যাগনিফিকেশন)
  • লেন্সের ব্যাস: ৮২ মিমি
  • ম্যাগনিফিকেশন: ২০-60x

মাঝারি দামের স্পটিং স্কোপ (Best mid-priced): Celestron Regal M2 20-60×80 mm ED Angled Zoom Spotting Scope: এই স্পটিং স্কোপ-এ রয়েছে 20-60x জুম আইপিস এবং ভালো ভিউয়ের ক্ষেত্র।

  • ওজন: ১৮৮৭ গ্রাম (আইপিস সহ)
  • ভিউয়ের ক্ষেত্র: ১১০-৫২ ফুট/ ১০০০ গজ
  • ক্লোজ ফোকাস: ২১.৩ ফুট (২০x)
  • আই রিলিফ: ২০ মিমি (২০x)
  • ম্যাগনিফিকেশন: ২০-60x

বাইনোকুলার ও স্পটিং স্কোপ কেনার আগে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী ম্যাগনিফিকেশন, লেন্সের ব্যাস, ভিউয়ের ক্ষেত্র এবং ওজনের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত।

এছাড়াও, ব্যবহারের স্থান ও সময়ের উপর নির্ভর করে সঠিক পণ্য নির্বাচন করা প্রয়োজন।

উদাহরণস্বরূপ, কম আলোতে ছবি তোলার জন্য বড় লেন্সের বাইনোকুলার ভালো কাজ করবে।

পাখি দেখা শুধুমাত্র একটি শখ নয়, এটি প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপনের একটি দারুণ উপায়। সঠিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে আপনি আপনার এই অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করে তুলতে পারেন।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *