পাকিস্তানের সাথে আফগানিস্তানের চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে অবশেষে নতুন করে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে দেশ দুটি। কাতারের রাজধানী দোহাতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে উভয়পক্ষ এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তুরস্কও এই আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছে বলে জানা গেছে। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা সীমান্ত সংঘর্ষের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
উভয় দেশই এখন ‘টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতা’র লক্ষ্যে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় সংঘাত ছিল। দুই দেশের মধ্যে প্রায় ১,৬০০ মাইল দীর্ঘ একটি বিতর্কিত সীমান্ত রয়েছে।
সীমান্তের এই বিবাদকে কেন্দ্র করে ১০ই অক্টোবর থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। আফগানিস্তান অভিযোগ করে, পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালিয়েছে। এর জবাবে আফগানিস্তানও পাল্টা আক্রমণ করে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানিস্তান তাদের দেশে সক্রিয় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে। নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, কাবুল সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা পরিচালনাকারী কোনো গোষ্ঠীকে সমর্থন করবে না।
একইসাথে, উভয় পক্ষই একে অপরের নিরাপত্তা বাহিনী, বেসামরিক নাগরিক বা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর হামলা করা থেকে বিরত থাকবে। তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে, বুধবার ৪৮ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিন ধরে চলা এই সংঘর্ষে উভয়পক্ষের বহু সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর শুক্রবার তা বাড়ানো হয়। শান্তির আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হলেও, এর মধ্যেই সহিংসতা অব্যাহত ছিল।
বৈঠকের আগে, আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল দোহা পৌঁছায়। আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্ত প্রদেশ পাকতিকাতে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেছেন, তাদের নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্ত এলাকায় জঙ্গিদের ‘শনাক্তকৃত’ ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। তিনি আরও জানান, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং সন্ত্রাসীদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা।
তারার দাবি করেন, যুদ্ধবিরতি চলাকালীন জঙ্গিরা পাকিস্তানের ওপর হামলার চেষ্টা করেছিল, তবে তা প্রতিহত করা হয়েছে এবং এতে ১০০ জনের বেশি জঙ্গি নিহত হয়েছে। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড জানিয়েছে, পাকিস্তানের হামলায় পাকতিকাতে তিনজন ক্রিকেটারসহ আটজন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা একটি ফ্রেন্ডলি ক্রিকেট ম্যাচ খেলে ফেরার পথে হামলার শিকার হন। এই ঘটনার প্রতিবাদে আফগানিস্তান আগামী মাসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে, যেখানে শ্রীলঙ্কারও অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
২০২১ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এই সংঘাত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগের কারণ। একসময় পাকিস্তানের সমর্থনপুষ্ট তালেবান এখন তাদের দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি সশস্ত্র সংঘাত বিষয়ক সংস্থা (ACLED) এর তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে টিটিপি পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ৬০০টির বেশি হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘের আফগানিস্তান সহায়তা মিশন (UNAMA) এর তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সংঘর্ষে আফগানিস্তানে অন্তত তিন ডজনের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, উভয় দেশের মধ্যে দ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। তথ্য সূত্র: সিএনএন