পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা বাড়ছে, বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই এই আলোচনা আন্তর্জাতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
চীনের উদ্যোগে আয়োজিত এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি অংশ নেন।
বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে কিভাবে স্বাভাবিক করা যায়। দুই দেশের মধ্যে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের বিষয়ে নীতিগতভাবে ঐকমত্য হয়েছে এবং চীন এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করবে বলে জানিয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই জানান, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি)-এর বিস্তৃতি আফগানিস্তান পর্যন্ত ঘটানো যায় কিনা, সেই বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এই আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে প্রায়ই জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে, যার জন্য তারা আফগান তালেবানকে দায়ী করে থাকে।
পাকিস্তানের অভিযোগ, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোকে আফগান তালেবান মদদ যোগাচ্ছে। যদিও তালেবান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বৈঠকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়টি বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। কারণ, গত বছর পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় নিরাপত্তা কর্মীসহ প্রায় ১০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে, আফগানিস্তান চায় আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং সংযোগ বৃদ্ধি করতে। সেক্ষেত্রে চীনের মধ্যস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, বেইজিং একইসঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং বাণিজ্য প্রসারের মাধ্যমে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনতে চায়।
আঞ্চলিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের জন্য আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি একটি উদ্বেগের বিষয়। তবে, তারা মনে করেন, চীনের সমর্থন এবং মধ্যস্থতা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশেষ করে, সিপিইসি’র মতো প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।
অন্যদিকে, ভারত এবং আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। সম্প্রতি, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং আফগান ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। কারণ, তারা মনে করে, ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক বৃদ্ধি পেলে তা পাকিস্তানের স্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, চীন, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বিশেষ করে, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং বাণিজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগের কারণ। তবে, চীনসহ অনেক আঞ্চলিক দেশ মনে করে, সেখানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব।
এখন দেখার বিষয়, এই ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা