পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করেছে দেশটির সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে সামরিক সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সামরিক ইতিহাসে ফিল্ড মার্শাল একটি সম্মানজনক পদ, যা সাধারণত সেনাবাহিনীর প্রধান বা বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেওয়া হয়।
মে মাসের শুরুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংক্ষিপ্ত, তবে তীব্র সামরিক উত্তেজনা দেখা দেয়। দু’পক্ষই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করে, যা পঞ্চম যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ পরিস্থিতি শান্ত হয়। উভয় দেশই এই সংঘাতে নিজেদের জয় দাবি করেছে।
পাকিস্তানের সরকার সরাসরি এই সংঘাতের সঙ্গে জেনারেল মুনিরের পদোন্নতির সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
ফিল্ড মার্শাল পদটি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদমর্যাদার একটি। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য অনুসরণ করা দেশগুলোতে এই পদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
সাধারণত, একজন জেনারেলের চার তারকা থাকে, যা সেনাবাহিনীর প্রধান বা জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির (সিজেএসসি) চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা নির্দেশ করে।
তবে ফিল্ড মার্শাল তার থেকেও উচ্চপদ।
পাকিস্তানের ইতিহাসে এর আগে মাত্র দু’জনকে এই পদে উন্নীত করা হয়েছে: প্রথমজন ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান এবং দ্বিতীয়জন জেনারেল আসিম মুনির।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে, ফিল্ড মার্শাল পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক সম্মাননার প্রতীক।
তবে, এই পদোন্নতি আসিম মুনিরের নেতৃত্বকে আরও সুসংহত করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে, তিনি ২০২৩ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
তবে, সম্প্রতি পাস হওয়া একটি আইন অনুযায়ী, তিনি আরও পাঁচ বছরের জন্য এই পদে থাকতে পারবেন।
সামরিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, এই পদোন্নতি পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব আরও বাড়াতে পারে।
কারণ, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী দেশটির রাজনীতি ও সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে আসছে।
অতীতে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের নেতারাও বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর মদদে তাদের দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগ করেছেন।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার মনে করে, এই পদোন্নতি জেনারেল মুনিরের নেতৃত্বের প্রতি তাদের আস্থা ও সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ।
তাদের মতে, ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সামরিক সংঘাতের সময় মুনিরের সাহসী নেতৃত্ব পাকিস্তানকে রক্ষা করেছে।
পাকিস্তানের অর্থনীতি বর্তমানে কিছুটা স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে।
দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি এবং মূল্যস্ফীতিও কমে এসেছে।
তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, এই পদোন্নতি মূলত সরকারের রাজনৈতিক কৌশল এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার একটি পদক্ষেপ।
সব মিলিয়ে, জেনারেল আসিম মুনিরের ফিল্ড মার্শাল পদে পদোন্নতি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও সামরিক কাঠামোতে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
একইসঙ্গে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও এর কিছু প্রভাব থাকতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা