গরুর দৌড়: ক্রিকেট প্রেমী দেশে অন্যরকম আকর্ষণ!

পাকিস্তানের গ্রামীণ জনপদে, ক্রিকেট-অনুরাগীদের দেশে, এক অন্যরকম আকর্ষণ: ষাঁড়ের দৌড়।

পশ্চিম পাঞ্জাবের আটোক জেলার গ্রামগুলোতে, বিশেষ করে মালাল নামক স্থানে, প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় এই ঐতিহ্যবাহী খেলা। সবুজ ঘাস কিংবা আধুনিক স্টেডিয়ামের পরিবর্তে, এখানে দেখা যায় ধুলামাখা মাঠ, যেখানে মানুষজন ভিড় করে তাদের প্রিয় ষাঁড়দের দৌড় দেখতে।

খেলার এই ধরনটি পাঞ্জাবি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা শহরের আলো ঝলমলে ক্রিকেট এবং হকি স্টেডিয়ামের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগৎ তৈরি করে।

এই খেলার মূল আকর্ষণ হলো, কাঠের তৈরি একটি বিশেষ কাঠামোতে চড়ে বসা মানুষ এবং তাদের ষাঁড়দের মধ্যেকার প্রতিযোগিতা। ষাঁড়গুলো যখন তীব্র গতিতে ছুটে চলে, তখন মাঠের চারপাশে উপস্থিত থাকা শত শত দর্শক উল্লাস করে।

তাদের চিৎকারে মুখরিত হয় চারপাশ, যা গ্রামীন জীবনের এক উজ্জ্বল চিত্র ফুটিয়ে তোলে।

স্থানীয়দের কাছে, এই ষাঁড়ের দৌড় নিছক কোনো খেলা নয়, বরং এটি তাদের সংস্কৃতির একটি অংশ। সরদার হাসিবের পরিবার বহু বছর ধরে এই খেলার আয়োজন করে আসছে।

তিনি জানান, এই খেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের গর্ব। ষাঁড় পালনকারী কৃষক এবং ভূমি মালিকরা সারা বছর ধরে তাদের ষাঁড়দের প্রস্তুত করেন এই বিশেষ মুহূর্তটির জন্য।

বিজয়ী ষাঁড়টি মালিকের জন্য বয়ে আনে সম্মান, আর তাই ভালো ষাঁড়ের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতেও প্রস্তুত থাকেন অনেকে।

খেলাটির দিনটি যেন এক উৎসবের দিন। চারপাশে গান-বাজনা চলে, আর আকাশে ওড়ানো হয় অসংখ্য টাকা, যা সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা যায়।

নানা ধরনের ভাজা-পোড়া খাবারের গন্ধে ম-ম করে চারপাশ। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও এই সুযোগে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে, যা তাদের জীবিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক প্রতিযোগিতায় একশোর বেশি ষাঁড় অংশ নিয়েছিল, যেখানে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষজন তাদের প্রিয় ষাঁড় নিয়ে যোগ দিয়েছিল।

প্রতি বছর এই খেলার আয়োজন করা হয় এবং এটি গ্রামীণ জনপদের মানুষের কাছে এক আনন্দময় উপলক্ষ। প্রতিযোগী মুহাম্মদ রামজান জানান, তার ষাঁড় পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে, যা তার জন্য অত্যন্ত আনন্দের।

এই খেলা গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে তাদের সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এটি যেমন বিনোদন জোগায়, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *