যুদ্ধ? ভারতের আক্রমণের ‘গোয়েন্দা’ সতর্কতায় কাঁপছে পাকিস্তান!

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে, কারণ ইসলামাবাদের দাবি, নয়াদিল্লি আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। এক শীর্ষ পাকিস্তানি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, তাদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য গোপন খবর’ রয়েছে যে ভারত এই পদক্ষেপ নিতে পারে।

গত সপ্তাহে ভারতীয়-শাসিত কাশ্মীরের পাহালগামে জঙ্গিদের হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনার পরেই এই উত্তেজনা আরও বাড়ে। ভারত এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। পাকিস্তান নিরপেক্ষ তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছে।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আত্তাউল্লা তারার এক বিবৃতিতে গভীর রাতে জানান, তাদের কাছে খবর আছে যে ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে তিনি কী ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে এই দাবি করছেন, তা বিস্তারিত জানাননি।

জম্মু ও কাশ্মীর, যা বিশ্বের অন্যতম বিপদজনক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত, এর কিছু অংশ ভারত এবং কিছু অংশ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণ করে। উভয় দেশই পুরো অঞ্চলটির উপর নিজেদের অধিকার দাবি করে। এই দুটি পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ স্বাধীনতার পর থেকে কাশ্মীর নিয়ে তিনটি যুদ্ধ করেছে। বর্তমানে একটি নিয়ন্ত্রণ রেখা বা ‘লাইন অফ কন্ট্রোল’ (এলওসি) দ্বারা এই অঞ্চলটি বিভক্ত।

এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয় দেশই এই পরিস্থিতিতে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে ওয়াশিংটন ও বেইজিং উভয়ই কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং উভয় দেশকে উত্তেজনা কমাতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। চীনও দুই দেশের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার কথা বলেছে।

পাহালগাম হামলার পর ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করেছে। ভারত পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করেছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও একই পদক্ষেপ নিয়েছে। উভয় দেশই তাদের কূটনীতিক ও নাগরিকদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে দেশে ফিরতে বলেছে।

এছাড়াও, ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ জল-বণ্টন চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। এই চুক্তির ফলে দুই দেশের মধ্যে জল সরবরাহ নিয়ে বিবাদের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিন্ধু জল চুক্তি নামে পরিচিত এই চুক্তিটি ১৯৬০ সাল থেকে কার্যকর রয়েছে এবং এটিকে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বিরল কূটনৈতিক সাফল্যের উদাহরণ হিসেবে দেখা হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে সিন্ধু নদী ব্যবস্থা থেকে জল ভাগাভাগি করা হয়, যা পাকিস্তান ও উত্তর ভারতের কোটি কোটি মানুষের জীবন ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে, উভয় দেশই সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানাচ্ছে, মঙ্গলবার তারা বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলে ‘গোয়েন্দাগিরির’ জন্য ব্যবহৃত একটি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এর আগে, ভারতীয় নৌবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবরও উত্তেজনা বিরাজ করছে, এবং গত ছয় রাত ধরে সীমান্তের উভয় পাশে গোলাগুলি চলছে।

এই পরিস্থিতিতে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে, দুই দেশের মধ্যে যেকোনো সামরিক সংঘাত আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *