পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা: ড্রোন ভূপাতিত, পাল্টা হামলার আশঙ্কা।
সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর খবর অনুযায়ী, পাকিস্তান দাবি করেছে যে তারা ভারতীয় সীমান্তের আকাশে প্রবেশ করা ২৫টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
অন্যদিকে, ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালিয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে উভয় দেশেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
কাশ্মীর সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখা (Line of Control – LoC) বরাবর পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের অভিযোগ এনেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত হানার দাবি করেছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ভারতের এই হামলায় অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায়, পাকিস্তানও ভারতীয় সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয়, ভারতীয়-শাসিত কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর।
ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করেছে। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।
উভয় দেশই সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটাচ্ছে এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করছে।
পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী জানিয়েছেন, ভারতীয় ড্রোনগুলো মূলত ইসরায়েলি প্রযুক্তির তৈরি এবং করাচি ও লাহোরসহ বিভিন্ন স্থানে আক্রমণের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন ভারতীয় আগ্রাসনের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। অন্যদিকে, ভারত সরকার বলছে, তারা পাকিস্তানের সম্ভাব্য সামরিক টার্গেটগুলো ধ্বংস করেছে।
এই পরিস্থিতিতে, উত্তর ভারতের প্রায় ২০টি বিমানবন্দর আগামী ১০ই মে পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে বিমান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
পাকিস্তানের করাচি বিমানবন্দরের কার্যক্রমও কিছু সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল।
উত্তেজনা প্রশমনের জন্য সৌদি আরব ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বর্তমানে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদে অবস্থান করছেন এবং উভয় দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছেন।
এছাড়াও, পাকিস্তানের সংসদ সর্বসম্মতভাবে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে, যা যুদ্ধের সম্ভবনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।
তারা বলছেন, উভয় দেশই সম্ভবত উত্তেজনা কমাতে আপাতত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করা থেকে বিরত থাকবে, তবে সীমান্তে গোলাগুলি ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলতেই থাকবে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ভারত আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করে চেনাব নদীতে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিয়েছে, যা তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
সবমিলিয়ে, কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা বর্তমানে অত্যন্ত সংকটজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে, তা যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের সংঘাতের রূপ নিতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা