ইরানে আট পাকিস্তানি নিহত: শোক আর আতঙ্কে পাকিস্তান!

পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ইরানে আটজন পাকিস্তানি নাগরিককে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসলামাবাদ। ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশে সংঘটিত এই ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে তেহরানকে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।

শনিবার মেহরেস্তান কাউন্টিতে একটি কর্মশালায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, যেখানে নিহতরা সবাই ছিলেন পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দা এবং মেকানিকের কাজ করতেন।

ইরানের সরকারি সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, হামলাকারীরা শ্রমিকদের বেঁধে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে বেলুচ ন্যাশনালিস্ট আর্মি (বিএনএ) নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।

তারা দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা চাইছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং নিহতদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ইরানের সহযোগিতা চেয়েছে।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত তেহরানে নিযুক্ত মুদাসসির টিপু এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দুই দেশই এই ঘটনার তদন্তের জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

ইরানের রাষ্ট্রদূত রেজা আমিরি মোগাদ্দামও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসকে এই অঞ্চলের জন্য একটি সাধারণ হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন নয়। গত বছর দেশ দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।

এর আগে, চলতি বছরের জানুয়ারিতেও ইরান, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালায়, যার জবাবে পাকিস্তানও প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান সীমান্ত নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও একবার আলোচনায় নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে বেলুচিস্তান অঞ্চলে, যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও এখানকার মানুষ দারিদ্র্যের শিকার, যা সেখানকার বিদ্রোহকে আরও উস্কে দিচ্ছে।

বেলুচিস্তানে সক্রিয় অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-র নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সম্প্রতি, এই গোষ্ঠীটি একটি পাকিস্তানি যাত্রীবাহী ট্রেন হাইজ্যাক করে আলোচনায় আসে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান সরকার সাধারণত বিএলএ-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলেও, তারা প্রায়ই “জাইশ-আল-আদল” নামক একটি গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়।

এই গোষ্ঠী অতীতে ইরানে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে।

এই ঘটনার পর, ইরানের পক্ষ থেকে আঞ্চলিক পর্যায়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এমতাবস্থায়, সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে তেহরান ও ইসলামাবাদের মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *