পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের উপর প্রতিশোধমূলক হামলার হুমকির মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার অভিযোগ এনেছে, যা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলায় পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যেখানে বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
এর প্রতিক্রিয়ায়, পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “পাকিস্তান উপযুক্ত সময়ে এবং স্থানে আঘাত হানবে, যা বিশ্ব জানতে পারবে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই ধরনের কঠোর মন্তব্যের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। উভয় দেশই যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার, পাকিস্তান অভিযোগ করে যে ভারত তাদের আকাশসীমায় ‘কামikaze’ ড্রোন পাঠিয়েছে, যা করাচি ও লাহোরের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে ভূপাতিত করা হয়েছে।
যদিও ভারত ড্রোন হামলার কথা স্বীকার করেছে, তবে তারা দাবি করেছে যে এটি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আগে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়া ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মীর নিয়ে চলমান বিবাদের জের ধরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কয়েক দিন ধরে বাড়ছে। উভয় দেশই কাশ্মীরকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাবি করে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই এই অঞ্চল নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে। কাশ্মীর উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উভয় দেশের মধ্যেকার বিরোধ এখনো বিদ্যমান, যা এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের প্রতিশোধের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা নির্ভর করবে তারা ভারতের উপর কতটা আঘাত হানতে চায় তার ওপর। তারা এমনভাবে জবাব দিতে চাইবে যাতে সংকট আরও বেড়ে না যায়।
তবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হতে পারে। কারণ, উভয় দেশই সামরিক শক্তি প্রদর্শনে বদ্ধপরিকর।
ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত নিউ লাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির সিনিয়র ডিরেক্টর কামরান বখারি এই পরিস্থিতিকে ২০১৯ সালের তুলনায় অনেক বেশি বিপজ্জনক বলে মনে করছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ভারতের এই পদক্ষেপ ‘একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে’ এবং এর ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণের কয়েকটি পথ খোলা আছে।
এর মধ্যে অন্যতম হলো, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া উভয় দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানাতে পারে। এছাড়া, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান ‘রেড লাইন’ গুলো নতুন করে নির্ধারণ করা যেতে পারে, যেমন – ভারত যদি সিন্ধু জল চুক্তি পুনরায় মেনে চলে এবং পাকিস্তান যদি ভারতীয় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত না করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
তবে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, যুদ্ধ এড়াতে পারলেও, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার সম্পর্ক ইতোমধ্যে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কাশ্মীর নিয়ে অমীমাংসিত বিষয়গুলো উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা