ফিলিস্তিন রাষ্ট্র: পশ্চিমের স্বীকৃতি, বাস্তবে কি কোনো পরিবর্তন?

পশ্চিমের স্বীকৃতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ: বাস্তবতার গভীরে

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাসে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে আসছেন তারা।

সম্প্রতি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডার মতো প্রভাবশালী দেশগুলো ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চলেছে। তবে, এই স্বীকৃতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে, বিশ্বের ১৪০টির বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

তবে, বিশ্লেষকদের মতে, মাঠ পর্যায়ের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান কার্যত কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান হলো ইসরায়েলের পাশে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের নীতি, যেমন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদি বসতি স্থাপন, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, এই বসতিগুলো অবৈধ।

বর্তমানে প্রায় ৭ লাখ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে বসবাস করছেন। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ঘোর বিরোধী। তাদের মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার এবং গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার কথা বলছেন।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) দুর্বলতা ও দুর্নীতিও একটি উদ্বেগের বিষয়। অনেক ফিলিস্তিনি মনে করেন, পিএ তাদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।

লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা চ্যাথাম হাউসের একজন বিশেষজ্ঞের মতে, অসলো চুক্তির মাধ্যমে শান্তি প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা সবচেয়ে দূরে চলে গেছে।

ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উঠে আসে। ইসরায়েল মনে করে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হলে তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

তবে, কেউ কেউ মনে করেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিই ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য বেশি উদ্বেগের কারণ। কারণ, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকলে প্রতিরোধ আন্দোলন চলতেই থাকবে।

গাজায় হামাসের শাসন এবং সেখানকার ধ্বংসযজ্ঞ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সেখানকার প্রায় এক-দশমাংশ মানুষ নিহত বা আহত হয়েছেন।

পশ্চিমা দেশগুলোর স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের জন্য প্রতীকী গুরুত্ব বহন করে। তবে, এই স্বীকৃতি বাস্তব ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ইসরায়েলের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে বাণিজ্য ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে। একইসঙ্গে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকেও তাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।

কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক আরদি ইমসেইস মনে করেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার ফলে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশের কিছু বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়।

এর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে সম্মান জানানো এবং আত্মরক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের ভিন্নমত রয়েছে। কেউ মনে করেন, এটি ফিলিস্তিনিদের জন্য ইতিবাচক হবে।

আবার কেউ মনে করেন, এটি বাস্তব পরিস্থিতি পরিবর্তনে সহায়ক হবে না। তবে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের একটি স্থায়ী সমাধানে পৌঁছাতে হলে উভয় পক্ষকেই নমনীয় হতে হবে এবং আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *