গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিখোঁজ হওয়া ফিলিস্তিনি প্যারামেডিককে আটক করেছে ইসরায়েল, জানিয়েছে রেড ক্রস।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) জানিয়েছে, গত মাসে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিখোঁজ হওয়া ফিলিস্তিনি প্যারামেডিককে আটক করা হয়েছে। আটককৃতের নাম আসাদ আল-নাসাসরাহ।
তিনি ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্টের হয়ে কাজ করতেন।
গত ২৩শে মার্চের এক ঘটনার পর থেকে আসাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনার দিন, ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট (পিআরসিএস) ও ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা আহত সহকর্মীদের উদ্ধারের জন্য অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাচ্ছিলেন।
সেসময় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন ফিলিস্তিনি প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘের একজন কর্মচারীও ছিলেন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, সেনাদের হামলায় তাদের “এক এক করে” গুলি করা হয়েছিল। এরপর উদ্ধারকর্মীদের মৃতদেহ এবং উদ্ধারকারী যানগুলো বুলডোজার দিয়ে বালু খুঁড়ে পুঁতে ফেলা হয়, যা হত্যার প্রমাণ লুকানোর চেষ্টা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত কর্মীদের ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং তাদের কারও কারও হাত বাঁধা ছিল।
রেড ক্রিসেন্ট তাদের কর্মীদের উপর এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে এবং আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
নিখোঁজ প্যারামেডিক আসাদ আল-নাসাসরাহ (৪৭) গাজার বাসিন্দা ছিলেন এবং ১৬ বছর ধরে রেড ক্রিসেন্টের হয়ে কাজ করছিলেন।
ঘটনার সময় তিনি আহতদের উদ্ধারের জন্য যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সগুলোর মধ্যে ছিলেন। ঘটনার পর থেকে তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক মুনথার আবেদ (২৭) জানান, তিনি দেখেছেন ইসরায়েলি সেনারা আসাদকে জীবিত অবস্থায় ধরে নিয়ে যাচ্ছিল।
সেসময় তার চোখ বাঁধা ছিল।
রবিবার আইসিআরসি জানায়, তারা খবর পেয়েছে যে পিআরসিএস-এর প্যারামেডিক আসাদ আল-নাসাসরাহকে ইসরায়েলের একটি ডিটেনশন সেন্টারে আটক রাখা হয়েছে।
তবে, আইসিআরসি মুখপাত্র আসাদকে কোথায় রাখা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। ইসরায়েল এখনও পর্যন্ত তাকে সেখানে গিয়ে দেখার অনুমতি দেয়নি।
আইসিআরসি মুখপাত্র আরও জানান, ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে তারা ইসরায়েলের কোনো ডিটেনশন সেন্টারে আটক ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি।
আইসিআরসি সব ডিটেনশন সেন্টারে প্রবেশাধিকারের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে এবং বারবার বলছে যে সকল আটক ব্যক্তিকে মানবিক এবং মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করতে হবে।
পিআরসিএস এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আসাদ আল-নাসাসরাহকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ৬ সন্তানের জনক আসাদকে “মানবিক দায়িত্ব পালনের সময় জোরপূর্বক অপহরণ করা হয়েছে”।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)-র পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)-র দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ঘটনার মিল না থাকায় তাদের উপর চাপ বাড়ছে।
প্রথমে তারা দাবি করেছিল, সেনাদের সন্দেহজনকভাবে এগিয়ে আসা কিছু গাড়ির উপর গুলি চালাতে হয়, যেগুলোতে কোনো হেডলাইট বা জরুরি সংকেত ছিল না।
তবে পরে, ঘটনার শিকার এক ডাক্তারের মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সগুলো রেড ক্রিসেন্টের লোগোসহকারে জরুরি বাতি ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চালাচ্ছিল। এরপরে আইডিএফ তাদের বক্তব্য পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।
আহত মুনথার আবেদ জানান, অ্যাম্বুলেন্সে হামলার পর তাকে কয়েক ঘণ্টা ধরে ইসরায়েলি বাহিনী আটকে রেখেছিল।
তাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করা হয়, মারধর করা হয় এবং তার অতীত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
আইডিএফ জানিয়েছে, তারা এখন “অপারেশনাল তথ্য” পুনরায় পরীক্ষা করছে এবং কেন তাদের আগের বক্তব্যে ভুল ছিল তা বোঝার চেষ্টা করছে।
তারা আরও জানায়, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সেনারা আগের একটি ঘটনার পর “একটি সম্ভাব্য হুমকির কারণে গুলি চালিয়েছিল এবং হামলায় নিহত ছয়জনকে হামাস সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে”।
তবে, হামলায় নিহতদের কেউই সশস্ত্র ছিলেন না এবং এখন পর্যন্ত তাদের হামাস যোদ্ধা হিসেবে প্রমাণের কোনো নথি পেশ করা হয়নি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান