ফিলিস্তিনের নাগরিক মাহমুদ খলিল, যিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী, তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তার আইনজীবীরা। সম্প্রতি, অভিবাসন আদালত রায় দিয়েছেন যে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ গত মার্চ মাসের ৮ তারিখে খলিলকে আটক করে। তিনি বর্তমানে লুইজিয়ানার জেনা শহরের একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী রয়েছেন। খলিলের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তাদের মতে, এই বিতাড়ন প্রক্রিয়া মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করার চেষ্টা।
আদালতে শুনানিতে, সরকার পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, খলিলের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা অভিযোগ করে যে, খলিল ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভে জড়িত ছিলেন এবং তার কিছু বক্তব্য ‘জাতিবিদ্বেষী’ ও ‘হামাসপন্থী’। তবে, খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, সরকার এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি যা প্রমাণ করে যে খলিলের কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। তারা আরও উল্লেখ করেছেন যে, খলিলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী অর্থাৎ বাকস্বাধীনতার পরিপন্থী।
মামলার শুনানিতে বিচারক জানান, সরকারের যুক্তি খলিলকে বিতাড়িত করার জন্য যথেষ্ট। তবে, খলিলের আইনজীবীরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা এখন বোর্ড অফ ইমিগ্রেশন আপিলস-এ আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং একইসঙ্গে তারা খলিলের আশ্রয় প্রার্থনার বিষয়টিও বিবেচনা করছেন।
খলিলের আইনজীবী, মার্ক ভ্যান ডার হাউট, এই বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আজ আমরা আমাদের সবচেয়ে খারাপ উদ্বেগের প্রতিফলন দেখলাম। মাহমুদকে একটি প্রহসনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, যেখানে ন্যায্য বিচারের অধিকারকে চরমভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। অভিবাসন আইনকে ভিন্নমতের কণ্ঠরোধ করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।”
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, জানা যায় যে, এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েল-বিরোধী মত প্রকাশের কারণে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং কোনো কোনো অধ্যাপককে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এই ঘটনাগুলো একদিকে যেমন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন তোলে, তেমনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং মানবাধিকারের বিষয়টিকেও সামনে নিয়ে আসে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস