ফিলিস্তিনের ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর ইসরায়েলি কারাগারে মারা গেছে। ময়নাতদন্তে জানা গেছে, সম্ভবত দীর্ঘকাল অপুষ্টিতে ভুগে তার মৃত্যু হয়েছে।
নিহত কিশোরের নাম ওয়ালিদ খালিদ আহমদ।
ওয়ালিদের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে ইসরায়েলি এক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের করা ময়নাতদন্তে উঠে এসেছে, কারাগারে থাকাকালীন সম্ভবত দীর্ঘ সময় ধরে অপুষ্টিতে ভুগেছিল সে। গত ২২শে মার্চ মেগিদ্দো কারাগারে তার মৃত্যু হয়।
ফিলিস্তিনের বন্দী বিষয়ক সমিতি (PPS) সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সংঘাত শুরুর পর এই প্রথম কোনো নাবালকের মৃত্যু হলো।
ওয়ালিদের পরিবার ও পিপিএস এবং ফিলিস্তিনের বন্দী বিষয়ক কমিশনের যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গত বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর রামাল্লাহের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সিলওয়াদ শহর থেকে ওয়ালিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার বাবা খালিদ জানিয়েছেন, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পাথর ছোড়া এবং পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের অভিযোগে তাকে আটক করা হয়।
ওয়ালিদের পরিবারের সদস্যরা এইসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পিপিএস সূত্রে জানা যায়, ওয়ালিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি এবং আদালতের শুনানিতে বারবার বিলম্ব ঘটানো হয়েছিল।
ওয়ালিদের মৃত্যুর পাঁচ দিন পর তেল আবিবের আবু কবির ফরেনসিক ইনস্টিটিউটে তার মরদেহ পরীক্ষা করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে সিএনএনকে দেওয়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে দেখা যায়, তার শরীরে গুরুতর ওজন হ্রাস হয়েছিল। পেশি কমে যাওয়া, পেট দেবে যাওয়া এবং হাত- পায়ে প্রায় কোনো মাংস বা চর্বি ছিল না।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, “ময়নাতদন্তের ফলাফল থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ওয়ালিদ সম্ভবত চরম অপুষ্টিতে ভুগছিল। অন্তত ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে তার খাবার গ্রহণের পরিমাণ খুবই কম ছিল। অপুষ্টির কারণে মারাত্মক সংক্রমণ এবং সেপসিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।”
ওয়ালিদকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল কিনা – সে বিষয়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থা বা প্রতিরক্ষা বাহিনীর তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। দেশটির বিচার মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছে।
পিপিএস জানিয়েছে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া সংঘাতের পর ওয়ালিদ প্রথম কোনো নাবালক, যার মৃত্যু হলো। এমনকি ১৯৬৭ সাল থেকে হিসাব করলেও ইসরায়েলি হেফাজতে কোনো কিশোরের এমন মৃত্যু হয়নি। যদিও সিএনএন এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
পিপিএস আরও জানায়, সর্বশেষ সংঘাত শুরুর পর থেকে গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে অন্তত ৬৩ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হেফাজতে মারা গেছেন। এদের মধ্যে গাজার অন্তত ৪০ জন রয়েছেন।
ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সিএনএনকে জানানো হয়েছে, “আটকের শারীরিক অবস্থার প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে একটি মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছিল এবং তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়। একজন বন্দীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে, ঘটনার তদন্তের জন্য একটি দল গঠন করা হয়। তদন্ত শেষ হওয়ার পর এর ফলাফল যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।”
ওয়ালিদের বাবা খালিদ সিএনএনকে জানান, গত বছরের ৩০শে সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে তিনটার দিকে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের বাড়িতে ঢুকে তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে।
খালিদ আরও জানান, পরিবারের সদস্যরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার আদালতের শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনও ওয়ালিদের মরদেহ তাদের কাছে রেখেছে।
ওয়ালিদের মৃত্যুর দুদিন পর, অর্থাৎ ২৪শে মার্চ পরিবারকে এই খবর জানানো হয়। কয়েক দিন পর ময়নাতদন্তকারী মেডিকেল টিম থেকে ফোন করে তার মৃত্যুর ‘বেদনাদায়ক’ কারণ জানানো হয়।
খালিদ জানান, ওয়ালিদ খেলাধুলা ভালোবাসত এবং গ্রেপ্তারের আগে তার কোনো অসুস্থতা ছিল না। তার ছেলের মৃত্যুর জন্য তিনি কারাগারে তার প্রতি হওয়া আচরণকে দায়ী করেছেন।
খালিদ বলেন, “ওয়ালিদ একজন তরুণ ছিল, যার অনেক ভালো গুণ ছিল। যা ঘটেছে, তা অপ্রত্যাশিত।”
বন্দী বিষয়ক কমিশন এবং পিপিএস বলেছে, ওয়ালিদের মৃত্যু প্রমাণ করে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দীদের ওপর কী ধরনের ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়, যেখানে শত শত শিশুও বন্দী রয়েছে। পিপিএস আরও জানায়, সর্বশেষ যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল পশ্চিম তীরে গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করেছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫,৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন