পামেলা এন্ডারসন এবং সাঁতারের পোশাকের ফ্যাশন: পরিবর্তনের এক শতাব্দী।
সাঁতারের পোশাকের ফ্যাশন কিভাবে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে, সেই গল্প নিয়ে লন্ডনের ডিজাইন মিউজিয়ামে চলছে ‘স্প্ল্যাশ! এ সেঞ্চুরি অফ সুইমিং অ্যান্ড স্টাইল’ শীর্ষক এক প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নব্বই দশকের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘বেওয়াচ’-এর অভিনেত্রী পামেলা এন্ডারসনের পরা লাল রঙের সাঁতারের পোশাকটির ওপর।
পামেলা এন্ডারসনের ‘বেওয়াচ’ -এর সেই লাল পোশাকটি একসময় ফ্যাশন জগতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। প্রদর্শনীতে পোশাকটি একটি কাঁচের বাক্সে রাখা হয়েছে, যা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে।
ফ্যাশন ইতিহাসবিদ এবং এই প্রদর্শনীর কিউরেটর অ্যাম্বার বাটচার্ড জানান, এই পোশাকটি ছিলো সেই সময়ের সংস্কৃতি এবং ফ্যাশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেই সময় নারীদের শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে সমাজের একটি বিশেষ ধারণা ছিল, যা এই পোশাকের মাধ্যমে প্রকাশ পেত।
তবে, পামেলা এন্ডারসন পরবর্তীতে তাঁর ইমেজ পরিবর্তন করে দর্শকদের কাছে নিজেকে অন্যভাবে তুলে ধরেছেন।
‘বেওয়াচ’ টিভি সিরিয়ালটি নব্বইয়ের দশকে এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল যে, বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশের এক বিলিয়নেরও বেশি দর্শক প্রতি সপ্তাহে এটি দেখতেন।
এই সিরিজে পামেলা এন্ডারসনের উপস্থিতি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, অনেক আন্তর্জাতিক সম্প্রচারক শুধুমাত্র সেই এপিসোডগুলোই কিনতেন, যেখানে তিনি থাকতেন। এই শর্তটিকে ‘পামেলা ক্লজ’ নামেও ডাকা হতো।
প্রদর্শনীতে সাঁতারের পোশাকের বিবর্তনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। ১৯২০-এর দশকের ভারী পোশাক থেকে শুরু করে, ১৯৪৬ সালের আধুনিক বিকিনি এবং পরবর্তীতে স্পিডোর মতো পোশাকের আগমন এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।
এছাড়াও, এখানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ভিক্টর অ্যান্ড রলফের ডিজাইন করা পোশাক।
সাঁতারের পোশাক শুধু ফ্যাশনের পরিবর্তনই দেখায় না, বরং এটি সমাজের বিভিন্ন দিকও তুলে ধরে।
প্রদর্শনীতে এমন কিছু পুরনো সাঁতারের পোশাক রাখা হয়েছে, যা একসময় স্থানীয় কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ভাড়া দেওয়া হতো, যাদের নিজস্ব পোশাক কেনার সামর্থ্য ছিল না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড সাঁতারের পোশাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজাইন নিয়ে কাজ করছে।
উদাহরণস্বরূপ, ‘বিফকেক সুইমওয়্যার’-এর তৈরি করা নীল-সাদা ডোরাকাটা পোশাক, যা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের জন্য উপযুক্ত, তেমনিভাবে ‘গার্লস ক্রনিক্যালি রক’ -এর তৈরি পোশাক বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য, যা তাদের পোশাক পরতে সাহায্য করে।
কিউরেটর অ্যাম্বার বাটচার্ডের মতে, সাঁতারের পোশাক মানুষকে সামাজিক স্থানগুলোতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়।
প্রদর্শনীতে সাঁতারের পোশাকের সাথে সম্পর্কিত সৌন্দর্য বিষয়ক ধারণাও তুলে ধরা হয়েছে। পুরনো কিছু বিজ্ঞাপন এবং ম্যাগাজিনের কভারগুলি সেই সময়ের সৌন্দর্য মানদণ্ড তুলে ধরে, যেখানে শরীরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করার এবং ত্বককে মসৃণ করার উপর জোর দেওয়া হতো।
পামেলা এন্ডারসনের ‘বেওয়াচ’-এর পোশাকের উচ্চতা এবং এক-পিস ডিজাইন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল। অ্যাম্বার বাটচার্ডের মতে, এই পোশাকটি নব্বই দশকের ফ্যাশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল, যা পরবর্তীতে আবারও জনপ্রিয়তা লাভ করে।
পামেলা এন্ডারসন বর্তমানে তাঁর নিজের সাঁতারের পোশাকের ডিজাইন করেন। তিনি তাঁর ডিজাইন করা পোশাকের মাধ্যমে নারীদের বাস্তবতাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন, যা শুধু সমুদ্র সৈকতে ছবি তোলার ধারণার বাইরে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন