পানামা খালের বন্দর বিক্রির চুক্তি, চীনা কর্তৃপক্ষের বাধায় অনিশ্চয়তা।
বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ, পানামা খালের দুইটি বন্দর কেনার চুক্তি আপাতত স্থগিত হয়ে গেছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, চীনের অ্যান্টিট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ এই চুক্তির বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
চুক্তিটি সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল আগামী সপ্তাহেই।
এই চুক্তিটি মূলত একটি মার্কিন কনসোর্টিয়ামের, যার নেতৃত্বে ছিল বিশ্বের বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপক ব্ল্যাকরক। ব্ল্যাকরকের অধীনে থাকা সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এই কনসোর্টিয়াম হংকংভিত্তিক কোম্পানি সিকে হাচিসনের কাছ থেকে বন্দর দুটি কেনার কথা ছিল। সিকে হাচিসন বিশ্বের ২৩টি দেশে অবস্থিত মোট ১৯টি বন্দরের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
চীনের বাজারের নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই চুক্তির মাধ্যমে বাজারের সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা রক্ষার স্বার্থে এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় তদন্ত শুরু করেছে।
চীনের এমন পদক্ষেপে সিকে হাচিসন ঘোষণা করেছে যে, আগামী সপ্তাহে পানামার বন্দর দুটির চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হচ্ছে না।
পানামা খালটি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। প্রায় ৫১ মাইল দীর্ঘ এই খালটি দিয়ে সমুদ্রপথে বিশ্বের প্রায় ৪ শতাংশ বাণিজ্য সম্পন্ন হয়।
শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের কন্টেইনার বাণিজ্যের ৪০ শতাংশেরও বেশি এই পথ ব্যবহার করে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেশ উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগেও চীনকে এই খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়ে মিথ্যা অভিযোগ করেছিলেন।
এমনকি তিনি এই খাল পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন।
পানামা খালের গুরুত্ব শুধু বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পানামার অর্থনীতির জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আইডিবি ইনভেস্টের ডিসেম্বর মাসের একটি গবেষণা অনুযায়ী, পানামার বার্ষিক আয়ের ২৩.৬ শতাংশ আসে এই খাল এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন পরিষেবা থেকে।
শুধু ২০২৩ সালেই এই খাল প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি) মুনাফা করেছে।
পানামা খালটি একসময় যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এটি নির্মাণ করা হয় এবং দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রই এর পরিচালনা করত।
তবে পরবর্তীতে, কার্টার প্রশাসনের সময় এক চুক্তির মাধ্যমে এটি পানামার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা চায় মার্কিন জাহাজগুলোর জন্য খাল ব্যবহারের খরচ কমানো হোক।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলোকে বিনামূল্যে এই খাল ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া উচিত।
কারণ কোনো সংঘাতের সময় পানামা খালের সুরক্ষার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বর্তায়।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অবলম্বনে।