পানামার উপর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি, দুই দেশের মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর, এটিকে ‘ছদ্মবেশী আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা।
খবর অনুযায়ী, এই চুক্তির মাধ্যমে এক সময়ের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে আবার সেনা মোতায়েন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি নিশ্চিত করেছেন যে, পানামা খালকে “চীনের প্রভাব” থেকে মুক্ত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র এবং পানামার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (memorandum of understanding) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ও অন্যান্য নৌযানগুলো এই গুরুত্বপূর্ণ জলপথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। উল্লেখ্য, আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী পানামা খাল বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিরোধী দলগুলোর নেতারা বলছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে কার্যত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো পুনরায় স্থাপন করা হচ্ছে। তাঁদের মতে, যদিও পানামার সরকার এটিকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে মানতে নারাজ, তবে চুক্তির শর্তগুলো দেখলে এটিকে সামরিক উপস্থিতির পুনঃপ্রতিষ্ঠা বলেই মনে হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৭৭ সালের টরিজো-কার্টার চুক্তির মাধ্যমে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ পানামার হাতে আসার পর ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা দেশটি ত্যাগ করে।
ঐতিহাসিকভাবে, পানামার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অনেক পুরনো। ১৯৮৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “অপারেশন জাস্ট কজ” নামে পরিচিত এক সামরিক অভিযানে তৎকালীন নেতা ম্যানুয়েল নরিয়েগাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পানামাতে অভিযান চালিয়েছিল।
সে সময়, হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিল এবং অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, অনেক পানামাবাসী যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে সন্দেহের চোখে দেখছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, তারা পানামা খালের উপর পানামার মালিকানা স্বীকার করে। তবে, বিরোধী দল এবং স্বচ্ছতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা, উভয়ই সরকারের কাছে চুক্তির বিস্তারিত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে।
পানামার এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে চীন। দেশটি মনে করে, পানামা খাল একটি আন্তর্জাতিক জলপথ এবং এটিকে সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখা উচিত।
পানামা খালের গুরুত্ব বিবেচনা করলে, এই অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই খালের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং বিশ্বের প্রায় ৫ শতাংশ পণ্য পরিবহন করা হয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা