পানীয় জলে ফ্লোরাইড: কতটা নিরাপদ? বড় খবর!

**পানীয় জলে ফ্লোরাইড: স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা**

বাংলাদেশে সুপেয় জলের নিরাপত্তা এবং তার সঙ্গে দাঁতের স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তারা তাদের পানীয় জলে ফ্লোরাইড মেশানো সংক্রান্ত নীতি পর্যালোচনা করার কথা ভাবছেন।

এই প্রেক্ষাপটে, ফ্লোরাইডের উপকারিতা ও সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো নিয়ে আলোচনা করা জরুরি।

ফ্লোরাইড (Fluoride) একটি প্রাকৃতিক খনিজ যা মাটি, গাছপালা, জল এবং খাবারে সামান্য পরিমাণে পাওয়া যায়। এটি দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।

সঠিক মাত্রায় ফ্লোরাইড দাঁতকে মজবুত করতে এবং ক্যাভিটি (cavities), বা দাঁতের গর্ত, প্রতিরোধ করতে সহায়ক। বিভিন্ন দেশে শিশুদের জন্য ফ্লোরাইড সরবরাহ করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।

কোনো দেশে জলের সঙ্গে ফ্লোরাইড মেশানো হয়, আবার কোনো দেশে দুধ বা লবণে ফ্লোরাইড যোগ করা হয়। কিছু দেশে বিদ্যালয়ে ফ্লোরাইডযুক্ত মাউথওয়াশ ও বার্নিশ ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪৫ সাল থেকে জনসাধারণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পানির সঙ্গে ফ্লোরাইড মেশানো শুরু হয়। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) এই ব্যবস্থাটিকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ স্বাস্থ্য বিষয়ক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

তাদের মতে, এর ফলে শিশুদের মধ্যে দাঁতের ক্ষয় (cavities) প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। তবে, ফ্লোরাইডের অতিরিক্ত মাত্রা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সতর্ক করে বলেছে, পানির সঙ্গে অতিরিক্ত ফ্লোরাইড মেশানো হলে দাঁতের এনামেল এবং হাড়ের ক্ষতি হতে পারে। একে স্কেলেটাল ফ্লুরোসিস (skeletal fluorosis) বলা হয়, যা হাড় দুর্বল করে এবং শরীরে ব্যথা সৃষ্টি করে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্লোরাইডযুক্ত জল দাঁতের ক্ষয় কমাতে সহায়ক। উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্লোরাইডযুক্ত জল সরবরাহ করা হয় এমন এলাকার মানুষের মধ্যে দাঁতের সমস্যা কম দেখা যায়।

তবে, মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে ফ্লোরাইডের উপকারিতা কিছুটা কমেছে বলেও মনে করা হয়।

বিশ্বজুড়ে, ১৯৭০-এর দশক থেকে দাঁতের ক্ষয় কমতে দেখা গেছে, এমনকি যে সব দেশে পানির সঙ্গে ফ্লোরাইড মেশানো হয় না, সেখানেও। যুক্তরাজ্যে, ম্যানচেস্টার ও ব্ল্যাকপুলে শিশুদের জন্য ফ্লোরাইডযুক্ত দুধ সরবরাহ করার কর্মসূচি চালু আছে।

আইসল্যান্ডে, পানির সঙ্গে ফ্লোরাইড মেশানো না হলেও বিদ্যালয়ে ফ্লোরাইডযুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। জাপানেও স্কুলগুলোতে ফ্লোরাইডযুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহারের কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।

অন্যদিকে, অতিরিক্ত ফ্লোরাইড গ্রহণের ফলে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। সম্প্রতি, গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ফ্লোরাইড গ্রহণের কারণে শিশুদের মধ্যে স্নায়ু-সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এছাড়াও, অতিরিক্ত ফ্লোরাইড গ্রহণের ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার (IQ) সামান্য হ্রাস হতে পারে।

বাংলাদেশে দাঁতের স্বাস্থ্য এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। আমাদের দেশে সুপেয় জলের গুণমান এবং ফ্লোরাইডের মাত্রা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

ফ্লোরাইডের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দাঁতের স্বাস্থ্যরক্ষা এবং এর সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি। সরকারের পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর্মীদেরও এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *