ছেলেমেয়েদের বই পড়ে শোনানো নিয়ে অভিভাবকদের অনীহা বাড়ছে? সম্প্রতি এক জরিপে এমনটাই উঠে এসেছে।
বিশ্বজুড়ে শিশুদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। অভিভাবকদের একাংশ মনে করেন, শিশুদের বই পড়ে শোনানোর থেকে পাঠ্য বিষয় তৈরি করাই এখন মূল বিষয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা “হার্পারকলিন্স” এবং “নিলসন”-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, অভিভাবকদের মধ্যে যারা শিশুদের বই পড়ে শোনান, তাদের অর্ধেকেরও কম এই কাজটি উপভোগ করেন।
জরিপে অংশ নেওয়া অভিভাবকদের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা শিশুদের বই পড়ে শোনাতে আনন্দ পান। শিশুদের বয়স ০ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত ছিল।
২০১২ সালের তুলনায় বর্তমানে শিশুদের নিয়মিত বই পড়ে শোনানোর প্রবণতাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০১২ সালে যেখানে ৬৪ শতাংশ অভিভাবক শিশুদের নিয়মিত বই পড়ে শোনাতেন, সেখানে বর্তমানে সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪১ শতাংশে।
মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে নিয়মিত বই পড়ার হার ছেলেদের চেয়ে বেশি। ০ থেকে ২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতিদিন অথবা প্রায় প্রতিদিনই বই শোনে এমন ছেলের সংখ্যা ২৯ শতাংশ, যেখানে একই বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হার ৪৪ শতাংশ।
হার্পারকলিন্সের ভোক্তা বিষয়ক পরিচালক অ্যালিসন ডেভিড এই বিষয়ে বলেন, “শিশুদের জন্য বই পড়াটা মজাদার করতে হবে।
কারণ, শিশুরা যখন শুনে, তখন তাদের কাছে বিষয়টি আনন্দদায়ক মনে হয়। কিন্তু অনেক শিশুই যে বাড়িতে আনন্দের সঙ্গে বই পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়।
এর ফলে তারা পড়ালেখাকে স্কুলের একটি বিষয় হিসেবেই বেশি মনে করে, যেখানে ভালো বা খারাপ করার সুযোগ থাকে, কিন্তু আনন্দের কোনো স্থান থাকে না।”
জরিপে আরও দেখা গেছে, বর্তমান প্রজন্মের (Gen Z) অভিভাবকদের মধ্যে শিশুদের বই পড়াকে একটি উপভোগ্য বিষয় হিসেবে দেখার চেয়ে বরং শেখার বিষয় হিসেবে বেশি মনে করার প্রবণতা রয়েছে।
এই প্রজন্মের অভিভাবকেরা ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। তাই তাদের ধারণা, বইয়ের চেয়ে ডিজিটাল বিনোদনই বেশি আকর্ষণীয়।
তবে, Gen Z-এর অধিকাংশ অভিভাবক শিশুদের বই পড়াকে এখনো আনন্দের একটি দিক হিসেবেই দেখেন। তাদের মধ্যে ৩১ শতাংশ মনে করেন, বই পড়াটা শেখার চেয়ে বেশি উপভোগের বিষয়, এবং ৩৫ শতাংশ মনে করেন, পড়া শেখা এবং উপভোগ করা দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, ২৮ শতাংশ মনে করেন, বই পড়াটা মূলত শেখার বিষয়।
জরিপে অংশ নেওয়া অভিভাবকদের অনেকেই জানান, তাদের হাতে শিশুদের বই পড়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই। এছাড়া, শিশুদের পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপের কারণেও তারা বই পড়ার সুযোগ পায় না।
২০১২ সালে যেখানে ২৫ শতাংশ অভিভাবক এমনটা বলেছিলেন, সেখানে বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে।
অন্যদিকে, ৪৪ শতাংশ অভিভাবক জানিয়েছেন, শিশুদের বই পড়ে শোনানো তাদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি করে।
অ্যালিসন ডেভিড আরও জানান, “শিশুদের নিয়মিত বই পড়ে শোনালে তারা দ্রুত এর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং নিজেরাই পড়তে উৎসাহিত হয়।
যারা শিশুদের প্রতিদিন বই পড়ে শোনান, তাদের শিশুরা অন্যদের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি বই পড়তে আগ্রহী হয়। শিশুদের সঙ্গে বই পড়ার ক্ষেত্রে কখনোই দেরি হয় না, বরং এতে সম্পর্ক আরও গভীর হয়।”
শিশুদের মধ্যে পাঠাভ্যাস ফিরিয়ে আনতে “পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন” কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে।
তারা পাঠ্যক্রমে আনন্দসহকারে পড়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছে। পাশাপাশি, শিক্ষকদের জন্য এমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে, যাতে তারা বিভিন্ন লেখকের লেখা থেকে শিশুদের উপযোগী করে গল্প বলতে পারেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান