প্যারিসের ঐতিহাসিক সেইন নদীতে অবশেষে আবার সাঁতার কাটতে নামলেন সাধারণ মানুষ। এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর, গত শনিবার থেকে ফরাসি রাজধানীর এই নদীতে জনসাধারণের সাঁতার কাটার অনুমতি মিলেছে। শহর কর্তৃপক্ষের ব্যাপক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে।
প্যারিসের মেয়র সহ স্থানীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে, আইফেল টাওয়ার এবং সেন্ট লুই দ্বীপের কাছে বিশেষভাবে তৈরি করা দুটি স্থানে সাঁতার কাটার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। দীর্ঘ এক শতাব্দীর নিষেধাজ্ঞা শেষে, এই দৃশ্য প্যারিসবাসীর জন্য ছিল আনন্দ এবং উদ্দীপনার।
নদীতে নামার আগে সাঁতারুদের জন্য ছিলো বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রত্যেক সাঁতারুকে লাইফ জ্যাকেট পরতে দেখা যায়, আর নদীর আশেপাশে সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করছিলেন প্রশিক্ষিত ডুবুরি ও উদ্ধারকারী দল। নদীর জল পরিমাপ করার পর জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জল মানের বিধি মেনেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সাঁতার কাটার এই সুযোগকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদিকে যেমন অনেকেই এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন, তেমনই অনেকে নদীর জলের স্বাস্থ্য নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আমিন হোসেনি জানান, “শহরের প্রাণকেন্দ্রে সাঁতার কাটতে পারাটা দারুণ, বিশেষ করে গরমের এই সময়ে।
অন্যদিকে, ফ্রাঁসোয়া ফোরনিয়ার নামের এক ব্যক্তি, যিনি নদীর তীরে বসবাস করেন, তিনি এখনো পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারেননি। তিনি বলেন, “আমি এখনো ঝুঁকি নিতে রাজি নই। সেইন নদীতে আমি এমন কিছু জিনিস দেখেছি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, তাই জল সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।
উল্লেখ্য, ১৯২৩ সাল থেকে দূষণ এবং নৌচলাচলের ঝুঁকির কারণে সেইন নদীতে সাঁতার কাটা নিষিদ্ধ ছিল। তবে, গত বছর অলিম্পিক গেমসকে কেন্দ্র করে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি) একটি বিশাল পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। এর ফলেই নদীর জল আগের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর হয়েছে।
তবে, কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্ধারিত স্থান ছাড়া নদীর অন্য কোথাও সাঁতার কাটা এখনো নিরাপদ নয়। সেইন নদীর এই নবজাগরণ, পরিবেশ সুরক্ষার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে, যা অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস