পরমাণু হুমকি বাড়ছে কেন? উদ্বেগে বিশ্ব

পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি : বিশ্ব কি আরেকটি শীতল যুদ্ধের দিকে?

সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা নতুন করে শুরু হয়েছে। একদিকে যেমন বিভিন্ন দেশের মধ্যে অস্ত্র নিয়ন্ত্রন চুক্তিগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, তেমনিভাবে কিছু দেশের পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার দ্রুত বাড়ছে।

প্রযুক্তি এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তনের কারণে এই পরিস্থিতি আরো জটিল রূপ নিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যেকার অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি (Strategic Arms Reduction Treaty – START) শীতল যুদ্ধের সময় অস্ত্র প্রতিযোগিতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৯১ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি উভয় দেশকে তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা কমাতে বাধ্য করে।

পরবর্তীতে, ২০১০ সালে ‘নিউ স্টার্ট’ নামে আরেকটি চুক্তি হয়, যা উভয় দেশের অস্ত্রভাণ্ডার আরও কমিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের ব্যবস্থা চালু রাখে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া এই চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় এবং পর্যবেক্ষকদের তাদের পারমাণবিক কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।

ফলে, এই চুক্তির ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে।

চীনের পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধিও উদ্বেগের কারণ। বেইজিং এর অস্ত্রভাণ্ডার দ্রুত বাড়াচ্ছে, কিন্তু তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো চুক্তি নেই।

বিশ্লেষকদের মতে, চীন বর্তমানে বছরে প্রায় ১০০টি নতুন পারমাণবিক ওয়ারহেড তৈরি করছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩৫ সাল নাগাদ তাদের কাছে প্রায় ১,৫০০ পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে।

চীন যদিও বলছে যে তাদের অস্ত্রভাণ্ডার এখনো যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার তুলনায় অনেক কম, কিন্তু তাদের এই দ্রুতগতিতে অস্ত্র তৈরির প্রবণতা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

অন্যদিকে, প্রযুক্তির অগ্রগতিও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুক্ত হওয়ায় পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে।

যদিও দেশগুলো এখনো নিশ্চিত করতে চাইছে যে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মানুষের হাতেই থাকবে, তবে সামরিক বিশ্লেষণে AI-এর ব্যবহার সময়সীমা কমিয়ে দিতে পারে এবং এর ফলে ভুল হিসাব-নিকাশের সম্ভাবনাও বাড়তে পারে।

বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধ একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মাঝে মাঝেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছেন।

এছাড়া, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সম্প্রতি পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে, বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার এবং এর ব্যবহারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশগুলোকে তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

একইসঙ্গে, কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিগুলোকে পুনরায় সক্রিয় করতে হবে। চীনের সঙ্গেও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন।

এছাড়া, AI-এর সামরিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে নতুন নিয়ম তৈরি করা দরকার, যাতে করে মানব নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা যায়।

অতএব, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার একটি গুরুতর সমস্যা এবং এর সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নতুন করে অস্ত্রের পরীক্ষা না করে, বরং মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *