যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক ব্রডকাস্টিং-এর ভবিষ্যৎ: আবারও সরকারি অর্থায়ন বন্ধের চেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অর্থায়নে চলা পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস (PBS) এবং ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (NPR)-এর তহবিল বন্ধ করার চেষ্টা আবারও জোরালো হয়েছে। দেশটির রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই এই গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আসছেন।
তাদের মূল আপত্তি হলো, এই মাধ্যমগুলো বামপন্থী আদর্শের প্রচারক এবং করদাতাদের অর্থে পরিচালিত হওয়া উচিত না।
এই বিতর্কের সূত্রপাত বহু পুরোনো। ১৯৭০-এর দশকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনও পাবলিক ব্রডকাস্টিংয়ের বিরোধিতা করেছিলেন।
পরবর্তীতে রোনাল্ড রিগান এবং জর্জ ডব্লিউ বুশও এর বাজেট কাটছাঁটের চেষ্টা করেন। কিন্তু সেসময় কংগ্রেসের বিরোধিতার কারণে সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে, পাবলিক ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (CPB)-এর সমস্ত ফেডারেল ফান্ডিং বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাব এখন কংগ্রেসের বিবেচনাধীন।
যদি এটি পাস হয়, তবে তা পিবিএস এবং এনপিআর-এর জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে।
কংগ্রেসের এই পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত গণমাধ্যম কর্মকর্তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ। তবে রক্ষণশীল বিভিন্ন সংগঠন একে স্বাগত জানাচ্ছে।
তাদের মতে, এই পদক্ষেপ তাদের দীর্ঘদিনের একটি আন্দোলনের ফল। তারা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন, পিবিএস ও এনপিআর-এর সংবাদ পরিবেশনায় উদারনৈতিক পক্ষপাতিত্ব রয়েছে।
এছাড়া, করদাতাদের অর্থে এই ধরনের গণমাধ্যম পরিচালনার কোনো প্রয়োজন নেই বলেও তারা মনে করেন।
অন্যদিকে, এনপিআর ও পিবিএস কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, তারা সকলের জন্য কাজ করে এবং কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি তাদের পক্ষপাতিত্ব নেই।
তাদের মতে, এমন সময়ে যখন সমাজে মেরুকরণ বাড়ছে, তখন একটি নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে এই বিলের ওপর ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। বিলটি পাস হলে তা সরাসরি সিনেটে যাবে।
যদি উভয় সভায় এটি অনুমোদন পায়, তবে পিবিএস ও এনপিআর-এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
উল্লেখ্য, পিবিএস ও এনপিআর-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোর একটি ক্ষুদ্র অংশই সংবাদ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক।
তাদের জনপ্রিয় কিছু অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ‘সিসেমি স্ট্রিট’ এবং ‘অ্যান্টিকস রোডশো’। এই অনুষ্ঠানগুলোর দর্শক তাদের ফেডারেল তহবিল রক্ষার জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
তবে ট্রাম্পের সমর্থক এবং রক্ষণশীল রাজনীতিবিদরা বলছেন, গণমাধ্যমের জগতে অনেক পরিবর্তন এসেছে।
তাই পিবিএস ও এনপিআর-এর এখন সরকারি অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল থাকার প্রয়োজন নেই। তাদের যদি দর্শকপ্রিয়তা থাকে, তবে তারা নিজেরাই অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন সূত্রে খবর।