মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাবলিক ব্রডকাস্টিং পরিষেবা (PBS) এবং ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (NPR)-এর ভবিষ্যৎ এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে। ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে তাদের তহবিল পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই দুটি গণমাধ্যমকে অর্থ অপচয়কারী এবং পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাদের মতে, পিবিএস ও এনপিআর-এর মাধ্যমে ‘সংবাদ’-এর মোড়কে ‘উগ্র, বামপন্থী প্রচার’ চালানো হয়।
এই বিতর্কের মূল কারণ হলো ফেডারেল সরকারের দেওয়া তহবিল। এই তহবিলের ওপর ভিত্তি করে পিবিএস এবং এনপিআর তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।
এই তহবিল বন্ধ হয়ে গেলে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে স্থানীয় স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমনটা হলে সেখানকার মানুষ জরুরি খবর এবং শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান থেকে বঞ্চিত হবে।
পিবিএস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পাওলা কার্গার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “পিবিএস-এর মতো আমেরিকান আর কিছু নেই। আমাদের কাজ সবসময় কংগ্রেসের দ্বিদলীয় সমর্থনের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে।”
আলাস্কা পাবলিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এড উলম্যানের মতে, অনেক ক্ষেত্রে, স্থানীয় সম্প্রচার কেন্দ্রগুলোই হলো ওইসব এলাকার শেষ ভরসা। তিনি আরও বলেন, “ফেডারেল তহবিল বন্ধ হয়ে গেলে, এই স্টেশনগুলোর অনেককেই হয়তো কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে হবে।”
এই পরিস্থিতিতে পিবিএস এবং এনপিআর-এর কর্মীরা জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। তারা আইনপ্রণেতাদের কাছে তাদের গুরুত্ব তুলে ধরে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, যাতে তহবিল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করা যায়।
নিউ হ্যাম্পশায়ার পাবলিক রেডিওর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিম স্ক্যাখটার বলেছেন, “আসলে, এটা টাকার বিষয় নয়। ফেডারেল বাজেটে এর পরিমাণ খুবই সামান্য, কিন্তু গণমাধ্যমের নাগরিক দায়িত্ব পালনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মুক্ত সাংবাদিকতার ওপর আঘাত।”
বর্তমানে, প্রতি বছর এই দুটি গণমাধ্যমের জন্য ৫৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হয়। এর মানে হলো, প্রত্যেক মার্কিন করদাতার জন্য এই খরচ হয় ১.৬০ ডলার।
এই অর্থে, স্টেশনগুলো শিক্ষা বিষয়ক অনুষ্ঠান, জরুরি বার্তা এবং বিভিন্ন ধরনের সংবাদ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিনামূল্যে সম্প্রচার করে থাকে।
মার্কিন কংগ্রেসে সাধারণত এই তহবিল নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। কিন্তু সম্প্রতি, ট্রাম্প প্রশাসন এই তহবিলের প্রায় ১.১ বিলিয়ন ডলার ফেরত নেওয়ার প্রস্তাব করেছে।
এই প্রস্তাব কংগ্রেসে পেশ করা হবে এবং এর ওপর ভোটাভুটি হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, পিবিএস এবং এনপিআর শিশুদের অনুষ্ঠানে ‘ড্রাগ কুইন’ দেখাচ্ছে এবং ক্ষতিপূরণের পক্ষে তথ্যচিত্র বানাচ্ছে, যা কিনা দেশটাকে বিভাজিত করছে।
অন্যদিকে, পিবিএস এবং এনপিআর কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে।
তারা বলছে, তাদের কেন্দ্রে স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদ, সংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠান, জীবন রক্ষাকারী জরুরি বার্তা এবং জননিরাপত্তামূলক তথ্য পরিবেশিত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ‘মর্নিং এডিশন’, ‘ফ্রেশ এয়ার’, ‘নোভা’ এবং ‘সিসেমি স্ট্রিট’-এর মতো জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলো তারা নিয়মিত সম্প্রচার করে।
আলাস্কা পাবলিক মিডিয়া, রাজ্যের একমাত্র রাজ্যব্যাপী সংবাদ নেটওয়ার্ক, যা ২৬টি স্থানীয় রেডিও স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করে।
এই নেটওয়ার্কে প্রায় ৬০ জন সাংবাদিক কাজ করেন।
তবে, এই বিতর্কের চূড়ান্ত ফলাফল এখনো অজানা।
যদি ফেডারেল তহবিল বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে স্থানীয় স্টেশনগুলোর কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
কারণ, তারা স্যাটেলাইট সংযোগ, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম এবং সঙ্গীতের লাইসেন্সের জন্য এই তহবিলের ওপর নির্ভরশীল।
সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ২৪ শতাংশ মানুষ সরকারি তহবিল বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন। ৪৩ শতাংশ মনে করেন, এই তহবিল অব্যাহত রাখা উচিত।
এই পরিস্থিতিতে, পিবিএস এবং এনপিআর তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য জনগণের সমর্থন চাইছে।
তাদের মতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এই লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন